ঘুরে আসা যাক জয়ন্তী বক্সা লেপচাখা উদ্যেশে

আপনি কি পাহাড় প্রেমী? ছুটি পেলেই মন ছুটে চলে পাহাড়ের দিকে? তাহলে আপনার জন্য সেরা গন্তব্যে ঠিকানা রইল বক্সা জয়ন্তী ও লেপচাখা। কিভাবে যাবেন কি দেখবেন সমস্ত কিছুই আপনাকে আমি জানাবো এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে। ডুয়ার্সে ঘিরে থাকা অরণ্য সুদূর বিস্তৃত চায়ের বাগান এবং আঁকাবাঁকা পথ কোন এক কল্প রাজ্যের চেয়ে কম কিছু না। আপনার মন ভালো করতে বাধ্য করবে। অনেকে জলপাইগুড়ি থেকে গাড়ি বুক করে সোজা চলে যান বক্সা জয়ন্তী উদ্দেশ্যে 160 কিলোমিটার পথ যেতে যা লাগে চার ঘন্টা মত আবার অনেকে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস ধরে আলিপুরদুয়ারে মাঝেমধ্যে ট্রেন রাজাভাতখাওয়া স্টেশনে দাঁড়ায় আপনারা চাইলে সেখানে নেমে যেতে পারেন সেখান থেকে দুই মিনিটের হাঁটা পথ ধরে চলে যান জয়ন্তি বাস স্ট্যান্ড ওখানেই পড়ে বক্সারের রিজার্ভে চেকপোস্ট চেকপোস্টের প্রবেশ মূল্য ভারতীয়দের জন্য একশো কুড়ি টাকা অন্যান্য দেশের জন্য 500 টাকা এবং চারচাকা যানবাহনের জন্য 400 টাকা। 2 চাকার যানবাহনের জন্য 30 টাকা এবং আপনি যদি ছাত্র-ছাত্রী হন তাহলে আপনাকে দিতে হবে কুড়ি টাকা প্রবেশ মূল্য।

চেকপোস্ট থেকে কিছু দূরে গেলেই আপনারা দেখতে পাবেন রাস্তা দুই দিকে ভাগ হয়ে গেছে একদিকে চলে গেছে বক্সা ফোর্ট সান্তাল বাড়ি লেখা আর অন্যদিকে চলে গেছে জয়ন্তি। নানা ধরনের গাছ লতাগুল্ম বৃক্ষজাতীয় ও অর্কিডের রাজত্ব চোখে পড়বে এখানে এছাড়াও হাতি বাঘ ক্লাউডেড বুনো কুকুর ইত্যাদি চোখে পড়বে। এই বক্সা অরণ্য কে হাজার 1992 সালে জাতীয় উদ্যানের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এখানে প্রচুর হোমস্টে আছে নিজের বাজেট অনুযায়ী একটা পছন্দ করে থেকে যান। ভাড়া 1200/1500 মত পরে। মনে রাখবেন 15 জুন থেকে 15 সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জঙ্গল বন্ধ থাকে । সেইসময় জয়ন্তী নদীর জল ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। কখনো কখনো এখানে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। সবচেয়ে ভালো সময় শীতকাল । জয়ন্তি নদীর ধারে বসে সূর্যাস্ত দেখলে আপনার ভীষণ ভালো লাগবে এরপর আপনারা পাবেন জঙ্গল সাফারি যেটা পরে বারোশো টাকা মত। আপনারা চাইলে জঙ্গল সাফারি আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। তার সামনেই পরে পখরী পাহাড়। ওখানের লেকে প্রচুর মাছ আর কচ্ছপ দেখতে পাবেন। তারপর গাড়ি নিয়ে কিছুটা যাবেন , জল কম থাকলে নদীর বুক গাড়ি ছুটে চলবে এবং তারপরে গাড়ি আপনাকে নিচে ছেড়ে দিতে হবে । এবং পায়ে হেঁটে আপনাকে উঠতে হবে মহাকাল মন্দিরে । প্রথমে পরে ছোট মহাকাল তারপরে বড় মহাকাল । উঠবার সময় পাহাড়ের গায়ে দেখবেন স্থায়ী এবং অস্থায়ী সিঁড়ি করা আছে। উপরে উঠে একটা ঝর্ণা ও চোখে পড়বে আপনাদের গুহার মধ্যে মহাকাল মূর্তি দর্শন করে নীচে নেমে আসুন । তারপর সামনে আরো একটি সুন্দর জায়গা দেখে নিন । তার নাম ভুটান ঘাট পাহাড়। তবে এটি দেখার জন্য আলাদা অনুমতি নিতে হয় । তবে জায়গাটি অসাধারণ যারা নেচার লাভ ফটো তুলতে ভালোবাসেন তাদের জন্য একটি আদর্শ জায়গা। অপর প্রান্তে রয়েছে ভুটান । আবার কিছু দূরেই আসামে সীমান্ত পাহাড় আর রায়মাটাং নদী সংমিশ্রণ আপনাকে মুগ্ধ করে তুলবে।

এবার জয়ন্তীর পর গন্তব্য হোক বক্সার উদ্দেশ্যে। রাস্তার দুধার জঙ্গলে পথ ধরে গাড়ি ছুটে চলবে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে। জয়ন্তি ছাড়িয়ে গাড়ি সান্তাল বাড়ি এসে পৌঁছালে এখানে গাইড নিতে হয় এখান নানারকম থাকার জায়গা পেয়ে যাবেন যেমন বন পাহাড়ি আরণ্যক প্রভৃতি রিসোর্ট তারপর গাইড এর সাথে ঘুরে বেড়ান জঙ্গলের ভিতর দিয়ে পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথে তারপর উঠে যান গাড়িতে উদ্দেশ্যে যেতে যেতে চা-কফি মম প্রচুর দোকান দেখতে পাবেন চারিদিকের সবুজের মাঝে দেখতে পাবেন মেঘেদের রাজত্ব আপনাকে ফ্রেশ করে তুলবে তারপরে ঘুরে দেখুন বক্সা দূর্গটি বক্সা দুর্গ প্রধানত তৈরি করেছিল ভুটানিরা ডুয়ার্সে আক্রমণ চালানোর জন্য। 1773 সালে এই দুর্গটি প্রথমবারের জন্য ব্রিটিশদের চোখে পড়ে এবং 1865 সালে দ্বিতীয় ভুটান যুদ্ধের শেষে সিঞ্চুলা চুক্তির মাধ্যমে এই দুর্গ পাকাপাকিভাবে ইংরেজরা দখল করে নেয়। দুর্গটি প্রথমে বাঁশের তৈরি ছিল পরে ইংরেজরা পাথরের বানায় এটা জেলখানা ছিল যা আন্দামানের সেলুলার জেলের থেকেও খতরনাক। বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী এই দুর্গের 1947 সাল পর্যন্ত বন্দী অবস্থায় ছিল। এখানে নির্জন নিরিবিলি সবুজে ঘেরা গ্রামটি ভীষণ সুন্দর বেশ কয়েকটা হোমস্টে এখানে আছে হাতে সময় থাকলে এখানে একটা দিন থাকতে পারেন অথবা লেপচখা। উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যেতে পারেন সামনেই পায়ে হাঁটা পথ লেপচাখা। জয়ন্তি যেমন ডুয়ার্সের রানী তেমনি লেপচাখা ডুয়ার্সের স্বর্গ বলা হয় কখনো রোদ ঝলমলে দুপুরের আকাশে হঠাৎ উড়ে আসে মেঘের চাদর লেপচাখা কে ঢেকে দিয়ে চলে যায়। সবুজ পাহাড়ে ঘেরা গ্রামটি। সুন্দর বনের মধ্যে দিয়ে চওড়া পথ আপনাকে হাঁটার দূর করে দেবে। ট্রেক ককরতে করতে প্রকৃতির অপরূপ শোভা হারিয়ে যাওয়া যায় । এখানে থাকার জন্য গোটা পাঁচেক হোমস্টে আসে থাকা-খাওয়া মিলিয়ে জনপ্রতি 800 টাকা পড়ে। লেপচাখা লেপচাখা আগে ভুটানের অন্তর্গত ছিল পরে ভারতের মধ্যে আসে তবু এখানকার মানুষ তাদের সংস্কৃতিকে আজোও বাঁচিয়ে চলেছে। এরপর লেপচাখ থেকে নেমে আসুন zero point দিকে। প্রচুর গাড়ি পাবেন যা সোজা চলে যেতে পারেন আলিপুরদুয়ারে।

আরো নতুন নতুন information জন্যে আমার সঙ্গে থাকুন।

Leave a comment