রাম নবমীর দিন রাম লালা কে নিবেদন করা হবে ১ লক্ষ ১১ হাজার ১১১ কেজির লাড্ডু অযোধ্যা রাম মন্দিরে । সংবাদ সংস্থা পিটি আই এর একটি প্রতিবেদন এমন তাই খবর জানানো হয়েছে । ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই বিপুল পরিমাণ লাড্ডু পাঠাচ্ছে দেবরাহা হংস বাবা ট্রাস্ট নামের একটি সংগঠন। এই সংগঠনটি গত ২২ জানুয়ারি রামমন্দিরে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার দিন ৪০ কেজির লাড্ডু পাঠিয়েছিল।
সংগঠনটির অন্যতম পদাধিকারী অতুলকুমার সাক্সেনা জানিয়েছেন, তাঁরা চান, রামনবমীর দিন শিশু রাম (রামলালা)-কে ওই বিপুল পরিমাণ লাড্ডু প্রসাদ হিসাবে দেওয়া হোক। তার পর তা ভক্তদের ‘প্রসাদ’ হিসাবে দেওয়া হোক।
গত ২২ জানুয়ারি ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’ করা হয়েছে রামলালার। পরের দিন, অর্থাৎ ২৩ তারিখ থেকেই সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় রামমন্দির দরজা। শিশু রামের দর্শনে আসা পুণ্যার্থীদের ভিড়ে স্থান সঙ্কুলান হচ্ছে না সেখানে। দেশ-বিদেশ থেকে ভক্তেরা রামলালার জন্য বিভিন্ন উপহারও পাঠাতে শুরু করেছেন, যার মধ্যে অনেকগুলিই অর্থের নিরিখে বেশ বহুমূল্য, এমনকি মন্দিরের গর্ভগৃহ পরিষ্কার রাখার জন্য উপহার হিসেবে পৌঁছেছে রুপোর ঝাঁটা। সেই ঝাঁটার ওজন নাকি প্রায় ২ কিলোগ্রাম!
অযোধ্যায় মন্দির প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম রাম জন্মোৎসব যথোচিত মর্যাদায় পালন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ভক্তদের ভিড় উপচে পড়ছে অযোধ্যার মন্দির প্রাঙ্গণে। সকাল থেকেই রীতি মেনে শুরু হয়েছে পুজোর আচার অনুষ্ঠান। মন্দিরের গর্ভগৃহতে সকাল বেলায় দুধ ঘি সহযোগে চলছে দিব্য অভিষেক পর্ব।
ভক্তদের যাতে অযোধ্যায় কোনও সমস্যা না হয় তার জন্য নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। ভোর ৩:৩০টা থেকে লাইনে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করেছে ট্রাস্ট। তবে সব ধরনের বিশেষ পাস, দর্শন-আরতি ইত্যাদির জন্য বুকিংয়ের ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই বন্ধ করা হয়েছে। দর্শনের জন্য একটাই পথ করা হয়েছে, সবাইকে এই একই পথ দিয়ে যেতে হবে। দর্শনের সময় বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৯ ঘণ্টা, যা চলবে প্রায় রাত ১১:৩০ মিনিট পর্যন্ত। চারবার খাবার দেওয়ায় সময় মাত্র পাঁচ মিনিট করে দর্শন বন্ধ করা হবে।
রাম নবমীর পূণ্যতিথি উপলক্ষ্যে রামলালার মন্দির সাজিয়ে তোলা হয়েছে ফুল-মালা ও আলোয় অপরূপ সাজে ।পুজোর শুভক্ষণ শুরু হবে বেলা ১২টা ১৬ মিনিটে। সেই সময় সূর্য রশ্মির ছটায় আলোকিত রামলালার বিগ্রহের মুখমন্ডল এক ঐতিহাসিক পরিবেশ সৃষ্টি করবে। গোটা মন্দিরে ধ্বনিত হবে বৈদিক মন্ত্র। নিবেদন করা হবে ৫৬ ভোগ। তারপর তা ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
জানুয়ারিতে রামলালার অভিষেকের পর এবারই প্রথম রামনবমীর আয়োজন করা হয়েছে অযোধ্যায়। ঠিক দুপুর বারোটার সময় হবে সেই সূর্যাভিষেক। সেসময় সূর্যের কীরণ কপাল ছুঁয়ে যাবে রামলালার। যাকে সূর্যতিলক বলে দাবি করেছেন পুজারিরা। রামলালা যেহেতু সূর্যবংশী সেকারণে এই সূর্যতিলক করা হবে তাঁর। সকাল থেকেই অযোধ্যার মন্দিরে তার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়ছে। অনেকের মনেই কৌতুহলের শেষ নেই কী এই সূর্যাভিষেক আর সূর্যতিলক। কী প্রক্রিয়া সেটি। কীভাবে সম্ভব হবে মন্দিরের মধ্যে বিরাজমান রামলালার কপালে সূ্র্যের রশ্মি পৌঁছনো তারপরে আবার দুপুর ১২টার সময়। সত্যিই কঠিন বিষয়। কিন্তু ভক্তি আর বিজ্ঞান দুই মিলেই সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখাতে চলেছে।সেকারণে বিপুল ভক্ত সমাগম হয়েছে সেখানে। রামলালার অভিষেক দেখার জন্য যেমন ভিড় হচ্ছিল ঠিক তেমনই রামনবমীতে তাঁর সূর্যাভিষেক দেখার জন্য ভিড় করছেন পূন্যার্থীরা। রামলালার সূর্যাভিষেক সম্পন্ন করতে সব আয়োজন করে ফেলেছেন রুরকি আইআইটির গবেষকরা। তার জন্য বসানো হয়েছে অপটিকাল গ্লাস। সেই অপটিকাল গ্লাসের মধ্য দিয়ে দুপুর ১২টার সময় সূর্যকিরণ গিয়ে পড়বে ঠিক রামলালার কপালে। চার মিনিট স্থায়ী হবে সেই সূর্যের রশ্মি। সম্পূর্ণ রশ্মি থাকবে ২ মিনিট ধরে। তার মধ্যেই অভিষেক সেরে ফেলতে হবে পুজারিদের।
আজ ভোর তিনটেয় মন্দিরের দরজা খুলেছে দর্শনার্থীদের জন্য। মাঝে রামলালার ভোগের জন্য মিনিট পাঁচেক মন্দিরের দরজা বন্ধ করা হবে। তারপরে আবার খুলে দেওয়া হবে মন্দিরের দরজা। হলুদ পোশাকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে রামলালাকে। আজ তাঁর জন্য ছাপ্পান্ন ভোগের আয়োজন হয়েছে। তাতে তিন রকমের পিঞ্জিরি থাকবে। পঞ্চামৃতও থাকবে তাঁর জন্য। ভোর তিনটে থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত আজ খোলা থাকবে রামলালার দরবার।রামনবমীর দিন ভিভিআইপিদের মন্দিরে না আসার অনুরোধ জানিয়েছে মন্দির কর্তৃপক্ষ। সূর্যতিলকের সময় মন্দিরের ভেতরে ভক্তদের প্রবেশের অনুমতি থাকবে। সূর্যতিলক দেখার জন্য ১০০টি এলইডি স্ক্রিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে মন্দিরে। তার মধ্যে ৫০টি এলইডি সরকার দিয়েছে। এই অনুষ্ঠানে আসার আগে ভক্তদের মোবাইল ফোন সহ কোনও মূল্যবান সামগ্রি সঙ্গে না রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে। প্রসার ভারতীও সরসারি টেলিভিশনে এই সূর্যতিলকের সম্প্রচার করবে।
এই সূর্য তিলকের জন্য বিশেষ প্রযুক্তির আয়না এবং লেন্স তৈরি করেছে সিবিআরআইয়ের গবেষকরা। অযোধ্যার মন্দির প্রাঙ্গনে ইতিমধ্যেই ফটোমেকানিকাল সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে। বেঙ্গালুরুর ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোফিজিক্স এই সিস্টেমটি তৈরি করেছে। একটি আয়না গতিশীল থাকবে যাতে সেটি ফোকাস বদল করতে পারে। প্রতি রামনবমীতেই এবার থেকে অযোধ্যায় সূর্যতিলক হবে।