অনেকদিন থেকেই ইচ্ছা ছিল চুপে চড়ে পাখি দেখতে যাওয়ার। কিন্তু কাজের ব্যস্ততার চাপে কিছুতেই হয়ে উঠছিল না। তাই একদিন হঠাৎ করেই বেরিয়ে পড়লাম চুপিচরের উদ্দেশ্যে। আমি তো চিরকালই ভিড়ভাট্টা এড়িয়ে নিরিবিলি শান্তির খোঁজে ঘুরে বেড়ায়। প্রথমেই বলে রাখি এই চুপি চর জিনিসটা ঠিক কি এবং কোথায় অবস্থিত। চুপি চর আসলে এটা পূর্বস্থলীতে ভাগীরথীর জলে পুষ্প একটি অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ ।প্রতিবছর শীতের সময় পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে পাখিরা এখানে আসে। আর তার টানে বছরে এই সময় অর্থাৎ এই শীতের শুরু দিক থেকে পক্ষী প্রেমী , ক্যামেরাম্যান সবাই একেবারে আসা-যাওয়া লেগেই থাকে। যার ফলে অনেকটা ভিড়ও দেখা যায় এই চুপিচরে বিশেষ করে শীতকালে এটি একটি পিকনিক স্পট হয়ে ওঠে । সকাল সকাল ট্রেন ধরে পৌঁছে গেলাম পূর্বস্থলীতে। ট্রেন থেকে নেমেই চা পান করে টোটো তে করে পৌঁছে গেলাম “কাষ্ঠশালী পাখিরালয় ” হোটেল এ। প্রথম দর্শনে মুগ্ধ হয়ে গেলাম এক লাইনে শাড়ি শাড়ি ঘর এবং মাঝে আছে রান্নাঘর এবং সামনেই আছে বিশাল মাঠ এর মাঝে খাবার ঘর । কিছুটা দূরে ছাউনি দেওয়া বসার জায়গা । চারিদিকটায় রেলিং দেওয়া পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে নদী। যাতে ভেসে বেড়াচ্ছে কত নাম না জানা পাখির দল। ঘরগুলি পিছন দিকে একটা বড় আম বাগানের মধ্যে দুটো tent ঘর সুসজ্জিত। একটি সোফা কাম বেড ও খাট মিলিয়ে দুজনের পক্ষে যথেষ্ট আরামদায়ক। প্রতি ঘরেই জল গরম করার জন্য ইলেকট্রিক কেটলি টি ব্যাগ চিনি ও দুধের মিনি প্যাকেট । বাথরুমে কোমট ও গিজার । অর্থাৎ আরামদায়ক ব্যবস্থাপনা ঘরে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে সকালে চা তৈরি করে চায়ের সাথে চলল দারুন জমজমাট আড্ডা । ততক্ষণে রান্না প্রায় শেষের দিকে ।তারপরে আমরা দুপুরের খাবার সেরে নিলাম । সুন্দর ঝর ঝরে ভাত আলু পোস্ত মাছের ঝোল চাটনি পাপড় ও মিষ্টি অত্যন্ত সুস্বাদু রান্না ও ভালো ব্যবস্থাপনা। হোটেলের লোক দিয়ে আমরা একটি নৌকা ভাড়া করলাম। শুরুতে কচুরিপানা ভর্তি জলাশয়। এই কচুরিপানাতে বেশ কিছু স্থানীয় পাখি থাকে । কিন্তু শুরুতে দেখতে পেলাম না। বেশ কিছুটা যাওয়ার পর কচুরিপানা কমতে শুরু করল। এবার দেখা মিলল বেশ কিছু পরিযায়ী ও স্থানীয় পাখি যেমন পোচারড ,কমন কুট, রেড ক্রেস্টেড, পারপেল হেরণ , লিটিল ক্রেব , লিটিল সেলো, লেজার হোসলিং টেলস ইত্যাদি। দেখতে দেখতে সূর্যি গেল পাটে, আকাশ ও জল রাঙিয়ে কিছু ছবি উপহার দিয়ে সন্ধ্যা কে আহবান করে সূর্য প্রস্থান করলেন। আর আমাদের নৌকা পারে ভিড়লো। তারপর সন্ধ্যেবেলায় চা চিকেন পকোড়া সহযোগে বেশ জমিয়ে আড্ডা চলতে লাগলো। রাতের খাবারের ডাক না আসা পর্যন্ত। তারপরে শেষে খাওয়া দাওয়ার পর যে যার নিজের ঘরে । সকাল থেকেই সকলেই ক্লান্ত কিছুক্ষণের মধ্যেই নিদ্রামগ্ন হলো সকলে। পরের দিন আমরা ফিরে যাব। ১১ টার মধ্যে ঘর ছাড়তে হবে। কুয়াশা ভরা সকালে ভাগীরথী মোহনার দিকে যাবার কথা। কাল কচুরিপানাতে যেসব পাখি দেখতে পায়নি, আজ সকালে তাদের কিছু দর্শন মিলল । যেমন ব্রোঞ্জ উইং জ্যাকআনা , পার্পেলমুরহেন , লেজার উই সিলিং টেল । আমরাও রেহনা দিলাম মোহনার উদ্দেশ্যে । ততক্ষণে কুয়াশা কাটিয়ে সূর্যদেবের দেখা মিলেছে। জলের অভাবে দুপাশে চড়া পড়েছে । তার ওপর ছোট বাঁধ ও একটি বড় বাঁধ ভাগীরথীর জলকে এই অশ্বক্ষুরাকৃতি রোদে ঢুকতে দিচ্ছে না। বা খুব কম মাত্রায় ঢুকছে। সরকারি উদ্যোগ না হলে কিছু বছরের মধ্যে পরিযায়ী পাখি আসা কমতে কমতে বন্ধ হয়ে যাবে। পর্যটন কেন্দ্রটি বিপদের মধ্যে পড়বে ।রুজি রুটিতে টান পড়বে এখানকার মানুষদের । আমাদের যাওয়া হলো না মোহনার দিকে কারণ ট্রেন ধরার তারা ছিল। কিছু গড ওয়াল দেখতে পেলাম । তারপর আমরা টিফিন করে আমরা ব্যান্ডের ট্রেন ধরলাম। আপনারা চাইলে এই পূজার ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন চুপিচরে বা শীতের পিকনিকের জন্য আদর্শ জায়গা।