ধনতেরাস বা ধনত্রয়োদশীর তাৎপর্য কি শুধুই সোনা গয়না বা ঝাঁটা কেনা? না রয়েছে অন্য কোনো গল্পও?

ধনতেরাস বা ধনত্রয়োদশী হল ভারতের অধিকাংশ স্থানে আয়োজিত দীপাবলী উৎসবের প্রথম দিন । এটি কার্তিক মাসের ত্রয়োদশ তিথিতে পালন করা হয় । ধনতেরাস এর দিন লক্ষী গণেশের সাথে ভগবান কুবের এবং ধন্বন্তরী দেবের পূজা করা হয়। তিনি হলেন হিন্দু ধর্মের দেবগণের চিকিৎসক । পুরাণে তিনি আয়ুর্বেদ সাথে সম্পর্কিত দেবতা রূপে আবির্ভূত হয়েছেন । কিংবদন্তী অনুসারে যখন দেবতারা ও অসুররা অমৃত কলসের জন্যে সমুদ্র মন্থন করেছিলেন । তারপর এই মন্থনের সময় একে একে ১৪ টি রত্ন পাওয়া গেল । মা লক্ষীকেও সেই ১৪ রত্ন গুলির মধ্যে একটি বিবেচনা করা হল । মা লক্ষীর মতো ভগবান ধন্বন্তরীও সমুদ্র মন্থন সময় জন্মগ্রহণ করেছিলেন । ভগবান ধন্বন্তরী যখন আবির্ভূত হন তখন তার হাতে একটি অমৃতের পাত্র ছিল । এই কারণে ধনতেরাস দিন বাসন কেনার রীতি চালু হয়েছে । ভগবান ধন্বন্তরীর জন্মের সময় তার হাতে একটি পিতলের কলসী ছিল তাই পিতলের পাত্র কেনার রীতি রয়েছে । তাকে বিষ্ণুর অবতার বলে মনে করা হয় । তিনি একজন সুদর্শন ব্যক্তি, ও চতুর্ভুজ, তার এক হাতে তিনি অমৃতপাত্র’ (অমরত্বের রসায়ন) বহন করেন। ধন্বন্তরি তিনি শঙ্খ, অমৃত, ঔষধি বৃক্ষ ও আয়ুর্বেদ বই ধারণ করেন বলে বর্ণনা করা হয়েছে।

ধনতেরাসের দিন পাত্রের পাশাপাশি মানুষ সোনা-রূপা ইত্যাদিও কেনে। এই দিনে যেকোনো কিছুর কেনাকাটা করা শুভ বলে মনে করা হয়। শাস্ত্র মতে, ধনতেরাসের দিনে কোনো কেনাকাটা করলে তা ১৩ গুণ বেড়ে যায়। তাই মানুষ বাসন, রূপা ও সোনা কেনে। এই দিনে লোকেরা রৌপ্য লক্ষ্মী-গণেশ, রৌপ্য মুদ্রা ইত্যাদি বাড়িতে নিয়ে আসে, যাতে ঘরে আশীর্বাদ থাকে এবং একই সাথে লক্ষ্মীর আশীর্বাদ পান। হারিয়ে যাওয়া লক্ষীকে ফিরিয়ে আনার উপাসনাই হচ্ছে ধনতেরাস। শ্রী শ্রী লক্ষীর আরাধনার মাধ্যমেই সূচনা হয় দীপাবলি উৎসবের।

লোক কথায় প্রচলিত আছে রাজা হিমের ছেলেকে বিয়ের চতুর্থ দিন যমের হাত থেকে বাচাতে নববধূ একটি ফন্দি আটেন । প্রচুর ধনরত্ন, সোনা-রূপো, বাসনপত্র আর প্রদীপ দিয়ে ঘরের দরজা ঘিরে রাখেন। প্রদীপের আলোয় এত ধাতুর জৌলুসে চোখ ধাঁধিয়ে যায় যমের। দিকভ্রষ্ট যমের হাত থেকে বেঁচে যায় রাজা হিমের পুত্র। এর থেকেই ধনতেরাসের বিশেষ দিনে শুরু হয় সোনা-রূপো-সহ ধাতু কেনার রীতি৷

অপর দিকে কাশীর রাজা ধন্বন্তরী তিনি তার রাজত্বের বাইরে গিয়েও আয়ুর্বেদ প্রচার করতেন। তার প্রচারেই আয়ুর্বেদ আমাদের দেশে এতো প্রসিদ্ধ। তাই আয়ুর্বেদ ও মহৌষধের কথা উঠলেই বলা হয় ধন্বন্তরীর নাম। ধন্বন্তরী জন্মেছিলেন ত্রয়োদশী তিথির শেষ লগ্নে চতুর্দশীর শুরুতে ত্রয়োদশী তিথিতে জন্ম গ্রহণ করেন, তাই তখন থেকেই আয়ুর্বেদ প্রেমিকরা তাঁর জন্ম তিথি ধন্বন্তরী ত্রয়োদশী হিসাবে পালন করে। হিন্দিতে এটাকে ধন্বন্তরী তেরস বা সংক্ষেপে ধনতেরস বলে। তাঁর সম্মানেই চতুর্দশী তিথিতে চোদ্দটি পুষ্টি গুণযুক্ত শাক খাওয়ার রীতি চালু আছে।

Leave a comment