টিপু সুলতান কে? ইংরেজদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কী ছিল?

টিপু সুলতান কে? ইংরেজদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কী ছিল?

টিপু সুলতান ছিলেন মহীশুরের স্বাধীন সুলতানির প্রতিষ্ঠাতা হায়দার আলির
পুত্র। টিপু নিজে বুঝেছিলেন যে সুযােগ পেলেই ক্ষমতার লােভে ইংরেজরা।
মহীশূরের ওপর আঘাত হানবে। তাই তিনি কোনাে মতেই সুচতুর ইংরেজকে
বিশ্বাস করতেন না। মহীশুরের বাঘ’ নামে পরিচিত এই শাসকটি তাই জন্মভূমি
রক্ষার জন্য নিজেও তরবারি হাতে যুদ্ধক্ষেত্রে বীরের মতাে প্রাণ দিয়েছিলেন।
তাই স্যার জন ম্যারিয়েট লিখেছেন—টিপুর মৃত্যুর ফলে ভারতের রঙ্গমঞ্চ থেকে
ইংরেজ কোম্পানির সর্বাপেক্ষা কঠোর, অটল, সর্বাপেক্ষা একাগ্র ও শক্তিশালী।
শত্রু অপসৃত হয়।
ইংরেজদের সঙ্গে টিপুর সম্পর্ক
টিপু সুলতান

১ বৈরিতার মনােভাব : মহীশূর শার্দুল টিপু ছিলেন ইংরেজের ঘােরতর শত্রু। সমসাময়িক ভারতবর্ষে তাঁর মতাে
ব্রিটিশের ভয়ংকরতম শত্রু সম্ভবত আর কেউই ছিলেন না। দক্ষিণ ভারতে ব্রিটিশের সম্প্রসারণ প্রতিরােধে লৌহসম
দৃঢ়তায় তিনি রুখে দাঁড়ান। দক্ষিণ ভারতে ইংরেজ শক্তিকে বিলুপ্ত করতে কেবল নিজ শক্তির ওপর নির্ভর না করে
তিনি ইংরেজের শত্রু ফ্রান্সের সম্রাট ও তুরস্কের সুলতানের কাছেও সামরিক সাহায্যের আবেদন জানান।

ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ: ম্যাঙ্গালােরের সন্ধি দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের স্থায়ী নিম্পত্তি ঘটাতে ব্যর্থ হয়। আসলে
এই সন্ধি ছিল নতুন এক যুদ্ধ শুরুর মাঝে সাময়িক বিরতি মাত্র। টিপু সুলতান বুঝেছিলেন যে, ক্ষমতার লােভেই
ইংরেজরা মহীশূর দখল করার চেষ্টা করবে। তাই তিনি গােপনে কনস্টান্টিনােপল, কাবুল, মরিশাস প্রভৃতি দেশের
সঙ্গে সামরিক সাহায্যের জন্য যােগাযোেগ রাখেন এবং ফরাসি সম্রাট ও তুরস্কের সুলতানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক
গড়ে তােলেন।

তৃতীয় যুদ্ধ: ইঙ্গ-ফরাসি দ্বন্দ্বের সময় ইংরেজরা নিজামের কাছে যে শক্তিসংঘ গঠনের প্রস্তাব পাঠায় তা থেকে
টিপুকে বাদ রাখে। টিপুকে এই জোটের বাইরে রাখায় টিপু অত্যন্ত মর্মাহত হন এবং ক্ষুদ্ধ হয়ে ব্রিটিশ অধীনস্থ
রাজ্য ত্রিবাঙ্কুর আক্রমণ করেন (১৭৯০ খ্রি.)। কর্নওয়ালিশ নিজাম ও মারাঠাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে ত্রিশক্তি জোট
গঠন করেন। এই শক্তি জোটের সঙ্গে টিপুর তৃতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পরাজিত হয়ে টিপু
ইংরেজদের সঙ্গে শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধি (১৭৯২ খ্রি.) স্বাক্ষর করেন, যার ফলে মহীশুর রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে।
যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ টিপু ৩ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা ও তার দুই পুত্রকে কোম্পানির কাছে জামিন হিসেবে রাখতে
বাধ্য হন।

চতুর্থ যুদ্ধ: ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে ওয়েলেসলি টিপুকে এক চরমপত্র পাঠিয়ে ‘অধীনতামূলক মিত্ৰতা নীতির
চুক্তিতে স্বাক্ষরের নির্দেশ দেন। টিপু এই চুক্তি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলে ওয়েলেসলির নেতৃত্বে ইংরেজ, মারাঠা
ও নিজামের জোট মহীশূর আক্রমণ করে, শুরু হয় চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ। সদাশির ও মলভেরির যুদ্ধে পরাজিত
হয়ে টিপু তার রাজধানী শ্রীরঙ্গপত্তমে আশ্রয় নেন। শত্রুপক্ষ রাজধানী অবরােধ করলে সংঘর্ষে টিপু নিহত হন।

উপসংহার : টিপু সুলতান আজীবন বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছিলেন। যদিও
শেষপর্যন্ত তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন, তবুও তাঁর ব্রিটিশবিরােধী সংগ্রাম দেশবাসীকে বিশেষত পরবর্তী প্রজন্মকে
জাতীয়তাবােধে উদ্বুদ্ধ করে তুলেছিল। যে সময় ভারতীয় রাজনীতিতে দেশীয় শক্তিগুলি একে অপরের সঙ্গে বিবাদে
ও গৃহযুদ্ধে লিপ্ত ছিল, সে সময়ে টিপু বিদেশি ইংরেজদের সঙ্গে সংগ্রামে এক মহান দেশপ্রেমী শাসকের পরিচয় দেন।

Leave a comment