শ্রী কৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর পবিত্র উৎসব পালিত হয় বছর ভাদ্রপদ মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে। জন্মাষ্টমীর দিন ঘরে ঘরে গোপাল পুজোর হিড়িক পড়ে গিয়েছে। এবং সেই সঙ্গে বাজারে সামগ্রী ও মিষ্টির দোকানগুলিতে ভিড় চোখে পড়ার মতো।সাধারনত মধ্য রাতে গোপালের জন্মদিন ও পুজো করার রীতি রয়েছে । সকাল থেকে রাত অব্দি উপস করে গোপালের পুজো আয়োজন করে থাকেন ভক্তরা । জ্যোতিষ এবং পঞ্চাঙ্গমতে, এবছর শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর দিনে ঘটতে চলেছে বিরল ও পবিত্র জয়ন্তী যোগ। এই যোগ কৃষ্ণ জন্মাষ্টমীতে গোপালের সেবা করা ও পুজো করা শুভ বলে মনে করা হয়।এই জয়ন্তী যোগের পাশাপাশি এদিন সর্বার্থ সিদ্ধিও যোগ তৈরি হচ্ছে। এই যোগে আপনি যে কাজই করুন না কেন, তাতে সাফল্য পাবেনই পাবেন। এবছর কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী কখন পড়েছে? এই পবিত্র উত্সবের শু মুহূর্ত ও পরামের সয়ই বা কেমন পড়েছে, তা পঞ্চাঙ্গ মতে জেনে নিন।
হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে, এ বছর ভাদ্রপদ মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথি শুরু হবে সোমবার, ২৬ অগস্ট ভোর ৩টে ৩৯ মিনিটে। পরের দিন মঙ্গলবার, ২৭ অগস্ট সকাল ২টো ১৯ মিনিটে শেষ হবে। উদয়তিথির ভিত্তিতে আগামী ২৬ অগস্ট সোমবার পালিত হবে শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর পবিত্র উৎসব।
এ বছর শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমীতে জয়ন্তী যোগ তৈরি হতে চলেছে। জয়ন্তী যোগ মানে দ্বাপর যুগে যে সময় শ্রী কৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল, সেই সময়ে যে যোগ তৈরি হয়েছিল, এবার সেই যোগ এবারের শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমীতে তৈরি হতে চলেছে। রীতি অনুসারে,একে জয়ন্তী যোগ বলে।
পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, শ্রী কৃষ্ণ বৃষ রাশির চন্দ্র রাশিতে রোহিণী নক্ষত্রে ভাদ্রপদ কৃষ্ণ অষ্টমীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এ বছরও, শ্রী কৃষ্ণ জন্মাষ্টমীতে রোহিণী নক্ষত্র ২৭ অগস্ট বিকেল ৩টে ৫৫মিনিট থেকে ৩টে ৩৮ মিনিট পর্যন্ত। এবারও জন্মাষ্টমীর দিন চাঁদ অবস্থান করবে শুধু বৃষ রাশিতে।
কৃষ্ণ জন্মাষ্টমীতে উপবাস করলে গোপাল পুজোর পর উপবাস ভাঙা সম্ভব হয়। মধ্যরাত ১২টা ৪৫ মিনিটের পর উপবাস ভঙ্গ করতে হবে। লাড্ডু গোপালের জন্মবার্ষিকী উদযাপন করার পরে, ভঙ্গ করে উপবাস সম্পূর্ণ করতে পারেন। সমাজে শ্রী কৃষ্ণজন্মাষ্টমী উদযাপনের জনপ্রিয় পদ্ধতি।সর্বার্থ সিদ্ধি যোগও ২৬ অগস্ট জন্মাষ্টমীর দিনে গঠিত হতে চলেছে। সেদিন, সর্বার্থ সিদ্ধি যোগ হবে ২৭ অগস্ট বিকেল ৩টে ৫৫ মিনিট থেকে ৫টা ৫৭ মিনিট পর্যন্ত। এ বছর শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর পূজার সময় মাত্র ৪৫ মিনিট। ২৬ অগস্ট জন্মাষ্টমীর শুভ সময় হল মধ্যরাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ১২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত।তবে ধর্মীয় শাস্ত্র অনুসারে, ২৭ অগস্ট রোহিণী নক্ষত্রের সমাপ্তির পর জন্মাষ্টমীর পরান উদযাপিত হবে। সেই পরানের উপর ভিত্তি করে সময় হল দুপুর ৩টে ৩৮ মিনিট। ইচ্ছে করলে জন্মাষ্টমীর পরের দিন সূর্যোদয়ের পরও পরাণ করে উপবাস সম্পন্ন করতে পারেন।
জন্মাষ্টমী ব্রত পালনের জন্য উপকরণ হিসেবে ফুল, আতপ চাল, ফলের নৈবেদ্য, ফুল, তুলসীপাতা, দূর্বা, ধূপ, দীপ, পঞ্চগব্য, পঞ্চগুড়ি, পাট, বালি, পঞ্চবর্ণের গুড়ো, মধু পর্কের বাটি, আসন-অঙ্গুরী সংগ্রহ করতে হয়। আপনি এইদিনে উপবাসে থেকে উপকরণগুলি দিয়ে শ্রীকৃষ্ণের পূজা করবেন । একটি শান্ত ও কোলাহল মুক্ত স্থান প্রয়োজন। স্থানটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখতে হবে এবং পুজোর জন্য স্নান সেরে রাখুন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের একটি ছবি অথবা মূর্তির সঙ্গে গণেশ মূর্তিও স্থাপন করা হয়ে থাকে। পাশে রাখতে হবে আপনাকে প্রদীপ ৷ মিষ্টি, ফল ও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী থালায় সাজিয়ে রাখতে হবে এইভাবে ।
মাথায় রাখবেন গোপালের প্রিয় খাবারগুলির মধ্যে রয়েছে মাখন মিছরি, ননী,নাড়ু, তালের বড়া,ক্ষীর, রাবরি, মালাই , মালপোয়া ইত্যাদি, যা সাজিয়ে গোপালের সামনে ভোগ হিসেবে নিবেদন করতে পারেন ৷ প্রথমে শ্রী গণেশের প্রার্থনা(ওম শ্রী গণেশায় নমহ) করতে হবে ৷ এরপর কিছুক্ষণ ধ্যান করতে হবে মন যাতে শান্ত থাকে। এরপর প্রদীপ জ্বালাতে হবে। শ্রীকৃষ্ণের প্রার্থনা (‘ওম নমঃ ভাগবতে বাসুদেবায়’)করতে হবে। এরপর ফুল অর্পন করতে হবে। তুলসি পাতা থাকলে ভাল হয়। তাছাড়া ধূপ জ্বালাতে হবে।
ফুল অর্পন করার সময় ঘন্টা বাজানোর রেওয়াজ আছে। ‘ওম নমঃ ভাগবতে বাসুদেবায়’ উচ্চারন করে যেতে হবে। এরপর ফল, মিষ্টি এবং অন্যান্য খাদ্য অর্পন করতে হবে। প্রার্থনা শেষে কিছুটা জল ছিটিয়ে দিতে হবে। কৃষ্ণ ভগবানের এই মন্ত্র বেশ কয়েকবার মনে মনে উচ্চারন করা যেতে পারে। এরপর ফল,মিষ্টি ও অন্যান্য খাদ্য প্রসাদ হিসাবে সবাইকে বিতরণ করতে হবে। পুজো শেষে ভগবত গীতা পাঠ করা হয়ে থাকে। এই ভাবেই গোপাল সন্তুষ্ট হবে আপনার পুজোতে।