ফের ২০০৩ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটল। টিম বদলেছে, পরিস্থিতি বদলেছে। বদলাল না শুধু ফলটুকু। ২০ বছর আগের বদলা নেওয়া হল না রোহিতদের , বরং তাদের যন্ত্রণা আরও বাড়ল।২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে স্টিভ ওয়’র অস্ট্রেলিয়ার কাছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হারতে হয়েছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভারতীয় দলকে। ১০ বছর ধরে আইসিসি ট্রফি জয়ের খরা কাটলনা। ১২ বছর পর বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হল দেশের ১৪০ কোটির মানুষের। আমদাবাদে নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে হেরে গেল ভারত।অস্ট্রেলিয়ার কাছে এখন ছয়টি বিশ্বকাপ শিরোপা। পরের সেরা দুটি করে ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এই পরাজয় যেমন ভারতীয় দর্শকদের মন কে বিষন্ন করেছে তেমনই ম্যাচ শেষে রোহিত, রাহুল, সিরাজদের চোখে দেখা গিয়েছে জল। এবারের বিশ্বকাপের প্রথম আটটি ম্যাচ ভারতীয় দল ব্যাটিং, বোলিংয়ের পাশাপাশি দুরদর্ষ ফিল্ডিং করেছে। কিন্তু লিগ পর্যায়ের শেষ ম্যাচে দুর্বল নেদারল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম এই টুর্নামেন্টে ভারতীয় ফিল্ডিংয়ের দুর্বলতা নজরে আসে। সেই সময় অনেকে ভেবেছিলেন হয়তো সেমিফাইনালের আগে বিশেষ চাপ নিতে চায় না বলে রোহিতরা একটু হালকা দিয়েছেন। কিন্তু সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ড ম্যাচেও পষ্ট দেখা গিয়েছিল ফিল্ডিংয়ের দুর্বলতা। আর ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেটাই যেন প্রমাণ হয়ে গেল ।
ভারতের হেরে যাওয়া পিছনে বিশেষজ্ঞ রা কয়েকটি কারণ পেশ করেছেন : -টস: অস্ট্রেলিয়া টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং বেছে নেয়, যা তাদের দলকে তাড়া করার পক্ষে সুবিধা দেয়। ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেছেন যে যেভাবেই হোক তিনি প্রথমে ব্যাট করতেন, তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে ফাইনালে টস হারানো একটি বড় কারণ ছিল।
পিচ: আহমেদাবাদের পিচটি প্রথম ইনিংসে কিছুটা ধীরগতির এবং শুষ্ক ছিল, যা অস্ট্রেলিয়ার কাটার এবং ভিন্নতা ব্যবহার করার বোলিং কৌশলের জন্য উপযুক্ত। ভারত পরিবর্তিত অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং মধ্যম ও ডেথ ওভারে গতি বাড়াতে পারেনি। অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করার জন্য পিচটিকে সহজ বলে মনে করেছিল, কারণ এটি চ্যাপ্টা হয়ে গিয়েছিল এবং খুব বেশি টার্ন বা বাউন্স দেয়নি।
অস্ট্রেলিয়ান টপ অর্ডার: প্রথম দিকে তিনটি উইকেট হারানো সত্ত্বেও, অস্ট্রেলিয়া তাদের আগ্রাসন হারায়নি এবং ভারতীয় বোলারদের আক্রমণ চালিয়ে যায়। ট্র্যাভিস হেড 104 বলে 137 রানের ম্যাচজয়ী নক খেলেন, এবং মার্নাস লাবুসচেনকে ভালভাবে সমর্থন করেছিলেন, যিনি অপরাজিত 58 রান করেছিলেন। এই জুটি চতুর্থ উইকেটে 191 রান যোগ করে এবং ভারতের কাছ থেকে খেলাটি নিয়ে যায়। ভারতের বোলিং অনুপ্রবেশ এবং ধারাবাহিকতার অভাব ছিল এবং অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের উপর যথেষ্ট চাপ তৈরি করতে পারেনি।
হার্দিকের অভাব: ভারত পরপর ম্যাচ জিতছিল ঠিকই কিন্তু কিছু বিষয় ছিল দলের বিপক্ষে। যেমন একজন যোগ্য অলরাউন্ডারের অভাব ছিল ।
সূর্যকুমার যাদবের অফ ফর্ম: সূর্যকুমার যাদবকে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে দেখে অনেকেই খুশি হতে পারেননি। টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে তাও কিছু রান পেলেও পরে নিজের ছন্দের ধারেকাছেও ছিলেন না তিনি। সেমিফাইনালে ওঠার আগে থেকে ফর্মে ছিলেন না সূর্য।হার্দিক পান্ডিয়ার বিকল্প ভারতীয় স্কোয়াডে ছিল না। শার্দুল ঠাকুর হার্দিক হতে পারেননি।
প্রথম ৭ ওভারের পর ভারতের বোলিংয়ের ধার কমে যায় : প্রথম বলেই ক্যাচের সুযোগ দিয়েছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। কাজে লাগাতে পারেনি ভারত। পরের দিকে ওয়ার্নার, মিচেল মার্শ এবং স্টিভ স্মিথ ফিরে যান। সাত ওভার এবং ৪৭ রানের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার ৩টি উইকেট ফেলে দেওয়ার পর রক্তের স্বাদ পেয়ে যাওয়া উচিত ছিল ভারতীয় বোলারদের। কিন্তু এর পরেই ভারতীয় বোলারদের ধার কমে গেল। এবং কাউকে এনেই সাফল্য পাওয়া যাচ্ছিল না। এর জন্যেও পরিস্থিতি দায়ী। পিচ থেকে এক ফোঁটা সাহায্য পাওয়া যায়নি।
অস্ট্রেলিয়ার পরিকল্পনার স্বচ্ছতা: ফাইনালের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ব্যাট এবং বল উভয় ক্ষেত্রেই একটি পরিষ্কার এবং ভালভাবে সম্পাদিত পরিকল্পনা ছিল। তারা দুর্দান্তভাবে ফিল্ডিং করেছে এবং পুরো ম্যাচে তাদের শান্ত রাখে। ক্যাপ্টেন প্যাট কামিন্স তার প্রধান বোলারদের বুদ্ধিমানের সাথে ব্যবহার করেন এবং তার পার্ট টাইমারদের কার্যকরভাবে ঘোরান। ভারতের স্কোর সীমিত করার জন্য তিনি গুরুত্বপূর্ণ ওভারগুলিতে তার সেরা বোলারদের ফিরিয়ে আনেন। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংও ছিল স্মার্ট এবং হিসেবনিকেশ, কারণ তারা প্রথম দিকের ধাক্কা খেয়ে আতঙ্কিত না হয়ে পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলেছে।
ভারত বিশ্বকাপ ফাইনালে হেরে যাওয়ার সম্ভাব্য কারণগুলির মধ্যে কয়েকটি কিছু মতামত দেওয়া হয়েছে। যাইহোক, অন্যান্য কারণও থাকতে পারে, যেমন খেলোয়াড়দের ফর্ম, ফিটনেস এবং ভাগ্য, ভক্তদের প্রত্যাশা এবং চাপ এবং খেলার অনির্দেশ্যতা। পরিশেষে, ক্রিকেট এমন একটি খেলা যেখানে যেকোনো কিছু ঘটতে পারে, এবং কখনো জয় তো কখনো পরাজয় স্বীকার করতেই হয় ।