_সিমুলিয়া_ আনন্দময়ী_কালীমা বসে আছেন বাবু হয়ে !!এক অত্যন্ত জাগ্রত অজানা কালীমন্দির..প্রায় ৩০০ বছর আগের সময়ের কথা। বাংলা ১১২৫ সন, ইংরাজি ১৭১৮ সাল। তখন শহর কলকাতার অবস্থার কথা এখন আমরা ভাবতে পারি? শহরের অধিকাংশ জায়গা ছিল জলাজঙ্গলে ভরা। আজকের ছাতুবাবু বাজার যেখানে, সেই আমলে সেখানে ছিল ওই একই অবস্থা। স্থানটি ছিল তৎকালীন প্রসিদ্ধ জমিদার ‘মিত্র পরিবার’-এর জমিদারির অংশ। বর্তমান মন্দির বাড়ির দুই সদস্যা শ্রদ্ধেয় শ্রীমতী তনুশ্রী ও মধুশ্রী, যাঁরা মায়ের সেবা-পরিচর্যায় আছেন তাঁদের ঠাকুরদাদের বাবা একদিন স্বপ্নাদেশে জানতে পারলেন তাঁদের ওই জলাজঙ্গলে অপূজিত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন দেবী কালিকা। পরের দিন যাওয়া হল মিত্তিরদের জঙ্গলে। স্বপ্নাদেশপ্রাপ্ত ভাগ্যবান গিয়ে দেখলেন জঙ্গলে মাতৃবিগ্রহ আছে বসা অবস্থায়। তখন মিত্র পরিবার প্রতিবেশীদের সাহায্য নিয়ে প্রতিষ্ঠা করলেন দেবীমন্দির।১৬০/২, রামদুলাল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৬। হেদুয়া পার্কের বিপরীতে, বেথুন কলেজের পাশের ওই রাস্তা ধরে সোজা গেলে ডানদিকে রাস্তার ধারে ‘বসা কালী মন্দির’। সাদামাটা লাল রঙের দালান মন্দির। মন্দিরের সারা গায়ে প্রাচীনত্বের ছাপ। সংস্কারের অভাব চোখে পড়ার মতো। প্রবেশপথে পুরনো আমলের কাঠের দরজা এখন নড়বড়ে অবস্থায়। লোহার গ্রিলের দরজা একটা আছে, তবে তেমন জুতের নয়। দরজার মুখেই হাড়িকাঠ। মোটা কাঠের উপর দাঁড়ানো ছাদ। কেউ না বলে দিলে চেহারায় বাইরে থেকে দেখে মন্দির বলে ঠাওর করার উপায় নেই। মন্দিরের প্রবেশমুখে ডানদিকে পাথরের ফলকে লেখা আছে –‘জয় আদি শ্রীশ্রী আনন্দময়ী কালী, স্থাপিতসন ১১২৫ সাল, স্বত্ত্বাধিকারী – শ্রী মতিলাল দেবশর্ম্মা’নাটমন্দির লাগোয়া গর্ভমন্দিরে শায়িত শিবের বুকে দেবী কালিকা বসে আছেন একদম বাবু হয়ে। মাথাভরা চুল বুকের উপর দিয়ে এলিয়ে এসে পড়েছে পায়ের কাছে। বসন পরা দেবীবিগ্রহ নির্মিত মাটি দিয়ে। অন্য ধরনের, প্রসন্নময় মুখমণ্ডল। ঘন কৃষ্ণবর্ণ। মহাদেবের মাথা দেবীর ডানদিকে। ডানদিকেই মাঝারি আকারের দাঁড়ানো মূর্তিটি দেবীর পাহারাদার কালভৈরব। সোনার জিভ। মাথায় মুকুট। আসনবেদী থেকে ধরলে উচ্চতায় দেবী আন্দাজ ফুট চারেক হবে। কলকাতার প্রাচীন কালীর মধ্যে বসা কালী রঙে-রূপে আকৃতিতে একেবারেই অনন্যসাধারণ। এমনটা বাংলার আর কোথাও দেখা যায় না। বসা অবস্থায় রয়েছেন বলে লোকমুখে মা বসা কালী নামে প্রসিদ্ধি পেয়েছে কিন্তু মায়ের আদি নাম ‘সিমুলিয়া আনন্দময়ী কালী’। তবে আনন্দময়ী কালী নামে খোঁজ করলে এ দেবীর সন্ধান মেলা ভার। অত্যন্ত জাগ্রত বলে বসা কালীর প্রসিদ্ধি সারা অঞ্চল জুড়ে।প্রতি মাসের অমাবস্যায় নিশিপুজো হয়। অমাবস্যা, একাদশী ও অম্বুবাচী তিথিতে মায়ের ভোগ হয় শোল মাছ দিয়ে। এখানে মাছ ও অন্নভোগ দেওয়া হয় আলাদা করে। এটাই এই মন্দিরের প্রথা। বসা কালী আনন্দময়ীর জাঁকালো উৎসব প্রতিপালিত হয় দীপান্বিতা অমাবস্যায়। মোগল বাদশাদের আমল গেল, পরে গেল ইংরেজ আমল তবুও মা করুণাময়ী বসা কালী আজও নিত্যপুজো পেয়ে আসছেন তাঁরই আশ্রিত ভক্তসন্তানদের মাধ্যম
সিমুলিয়া আনন্দময়ী কালী মা বসে আছেন বাবু হয়ে