সিন্ধু দেশে আরব বিজয় ব্যাখ্যা ও আলোচনা

সিন্ধু দেশে আরব বিজয় তাৎপর্য

ইরাকের শাসক হজের সেনাপতি মুহাম্মদ বিন কাসিম 712 খ্রিস্টাব্দে ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে সিন্ধু দেশে আরব শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। এই শাসনের ফলাফল ও তাৎপর্য নিয়ে ঐতিহাসিক মহলে নানা মত ব্যক্ত রয়েছে । লেন পুল শ্রীবাস্তব ঈশ্বরী প্রসাদ প্রমুখেরা এই শাসনকে অকিঞ্চিৎকর ও তুচ্ছ জ্ঞান অবহেলা করেছিল কিন্তু কর্নেল টড স্মিথ প্রমুখেরা এই শাসনকে সুদূরপ্রসারী ও তাৎপর্যপূর্ণ বলে অবহিত করেছেন।

লেনপুল , শ্রীবাস্তব প্রমুখেরা বলেন সময় দিক থেকে সিন্ধু দেশে আরব শাসন মাত্র কয়েক বছর স্থায়ী হয়েছিল স্বভাবতই ভারতীয়দের ওপর কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি শুধু এই শাসনে বৌদ্ধ ও হিন্দু জনগণ শোষণ ও নিপীড়নের শিকার হয়েছিল বিনিময় ভারতীয়রা কিছুই পায়নি। আবার সিন্ধু ছেড়ে চলে গেলে জনগণ এই শাসনের কথা ভুলে যায় সনাতন ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতির ওপর এই ই-শাসন কোন দাগ কাটতে পারেনি। লেনপুল তা‌ই লিখেছেন, “The arab conquest of of Sindh was a a Trump without any result”

কিন্তু কর্নেল টড, স্মিথ প্রমুখেরা বলেন সিন্ধু দেশে আরব শাসন ছিল সুদুরপ্রসারি ও তাৎপর্যপূর্ণ। এই সুবাদে আরবরা হিন্দু দর্শন আয়ুর্বেদ গণিতশাস্ত্র জ্যোতিষ বিদ্যা প্রভৃতি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেছিলে। বিখ্যাত আরবীয় পন্ডিত আবুমন্সুর এই সূত্র ধরে বেনারসে জ্যোতিষ বিদ্যা চর্চা করেন সমকালীন ঐতিহাসিক ত্রিবেদী রচনা থেকে জানা যায় বাগদাদের খলিফা হারুন-উল-রসিদে প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতার বহু ভারতীয় পন্ডিত জ্ঞানার্জনের জন্য আরবদেশে গমন করেন এই সময় ব্রহ্মগুপ্তের রচিত ‘ব্রম্ভসিদ্ধান্ত’ ও ‘খন্ড খাদক’ আরবি ভাষায় রচিত হয় গাণিতিক সংখ্যা সম্বন্ধে আরবরা লাভ করেছিল যে জ্ঞান তা ভারতীয়দের কাছ থেকেই এই কারণেই তারা ভারতীয় সংখ্যাকে হিন্দু সাম বলে ডাকত। ভারতীয়রা আরবদের কাছে থেকে শিখে ছিল Arab Alchemy বিদ্যা শুধু তাই নয় বহু আরবি গ্রন্থ সংস্কৃত ভাষায় অনুমোদিত হয় আরব আদব-কায়দা রীতিনীতি ভারতীয় সমাজে লাভ করেছিল সমাদর।
আরব শাসনের সূত্র ধরে উত্তর পশ্চিম ভারতে গড়ে উঠেছিল কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র । এই বাণিজ্য কেন্দ্র গুলির মধ্যে ভারত থেকে গিয়েছিল রান্না সুগন্ধি মসলা , বাসমতি চাল, রেশম বস্ত্র, প্রভৃতি থেকে এসেছিল খেজুর ও বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রী। এই বাণিজ্য সূত্র ধরেই ভারত থেকে বহু চিকিৎসক আরব জগতে পদার্পণ করে । রাজমিস্ত্রি ও চিত্রশিল্পী আরব দেশে গমন করেছিলেন। রাজপ্রাসাদ ও মসজিদগুলোকে সুসজ্জিত করে তোলে।
উপসংহারে তাই বলা যায় যে সিন্ধুদেশ আরব শাসন এক্কেবারে নিষ্ফল ছিলনা। স্থায়িত্বের বিচারে এই শাসন দীর্ঘস্থায়ী না হলেও সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক ধর্মীয় দিক থেকে এই শাসনের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। ঐতিহাসিক কর্নেল টড তাই লিখেছিলেন “সিন্ধু দেশে আরব শাসন ছিল একটা ফলদায়ক ঘটনা।”

Leave a comment