আমাদের ভারতবর্ষ নানা রহস্যে ঘেরা, নানা ধর্ম নানা ভাষা জাতির বাস নিয়ে আমাদের দেশ। সেখানে লুকিয়ে আছে এমন কিছু রহস্য যা শুনলে আপনি অবাক হয়ে যেতে পারেন। তেমনি এক রহস্যের কথা জানাবো আজ আপনাদের। আমাদের বিজ্ঞানের যুগে এসেও কিছু এমন রহস্য আছে যা উদঘাটন হয় নি। চলুন শুরু করা যাক।
সূর্যাস্তের পর মানুষ কেনো কোনো জীবজন্তুরও প্রবেশ অধিকার নাই এই বৃন্দাবন। একটা দুটো নয় একেবারে ৮টা তালা দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় রং মহল আর বাকে বিহারী দরজা। এবং সন্ধ্যা নামলেও মূল দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেন পূজারীরা। জীব জন্তুর ও চলে যায় মন্দির প্রাঙ্গণ ছেড়ে। কিন্তু কেনো? পুরাণে উল্লেখ আছে গোপীদের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলার বর্ণনা আছে । মধুবন নামে এক জায়গা আছে যেখানে গাছ পালা ঢাকা এক মনোরম অঞ্চল ছিল। ভগবান শ্রী কৃষ্ণের বড়ো প্রিয় জায়গা ছিল এই মধুবন। তিনি অবসর সময় কাটাতে এখানে আসতেন গোপীদের নিয়ে। সেই মধুবন লোকমুখে নিধিবন বা নিধুবন নামে আজকে পরিচিত।
ভক্তরা বলেন আজ শ্রীকৃষ্ণ তার গোপীদের নিয়ে প্রতি রাতে আসেন । এবং তার সাথে আসেন তার প্রেয়সী রাধিকা। প্রতি রাতে তারা গোপিনিদের সঙ্গে রাসলীলা মাতেন। তাই জন্যে আরতির পর নিধিবনের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সত্যি বড়ো আশ্চর্যের বিষয়। এখানে যেমন গাছপালা দেখা যায় তেমন কিন্তু আর কোথাও দেখা যায় না। গাছ গুলো আপনারা সামনে থেকে দেখলে বুঝতে পারবেন গাছ গুলো যেনো কারোর উদ্দ্যেশে মাথা নত করে দাড়িয়ে আছে। বৃন্দাবন কিন্তু শুষ্ক অঞ্চল কিন্তু নিধীবনের গাছগুলো চিরহরিৎ গাছ। এই শুষ্ক অঞ্চলে যে কি করে এমন গাছ বেচেঁ আছে তা ভাববার বিষয়। আপনারা এখানে যদি তুলসী গাছ গুলো লক্ষ করেন তাহলে দেখতে পাবেন সেগুলো ভারী অদ্ভুত। রাস নৃত্য আদলে এগুলো জোড়া জোড়া জন্মায়। সামনেই দেখতে পাবেন বিশাখাকুণ্ড নামক জলাশয়। খরার দিন এই জল সব সময় পরিপূর্ণ থাকে। কথিক আছে যে একদিন রাস নৃত্য চলাকালীন একজন গোপী জল তেষ্টা পায় এবং শ্রী কৃষ্ণ তার বাঁশির ছোঁয়ায় সেই জলাশয় টি তৈরি করেন। এটি বৈষ্ণব ভক্তদের কাছে খুব পবিত্র। এই বাকে বিহারী মন্দিরে রয়েছে শ্রী কৃষ্ণ কারুকার্য মন্ডিত এক অপূর্ব মূর্তি। যেটি দেখতে দেশে নানা প্রান্ত থেকে তার ভক্তরা ছুটে আসে।
কিন্তু সেই দর্শন সূর্যাস্তের আগে পর্যন্ত সূর্যাস্তের পরে ভক্ত কিংবা পূজারী মন্দিরে থাকার অধিকার নেই মন্দির কর্তৃপক্ষের কড়া নির্দেশ অনুযায়ী সূর্যাস্তের পর আর কাউকে মন্দির চত্বরে থাকতে দেওয়া হয় না। ভক্তদের কথা অনুযায়ী তারপরই আসেন শ্রীকৃষ্ণ তার প্রিয় রাধিকাকে নিয়ে এবং এই সময় জঙ্গলের সমস্ত গাছপালা জেগে ওঠে যেন চারিদিকে আলোয় ভরে যায় এবং এইসব গাছরা তখন হয়ে ওঠে শ্রীকৃষ্ণের গোপিনী ছদ্দবেশী গাছেরা তখন শ্রীকৃষ্ণের দর্শন এর আশায় যেন যুগ যুগ ধরে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই নিধুবনে। এই নিধিবনের সামনেই রংমহলের মধ্যে আরো একটি মন্দির রয়েছে এখানে গেলে আপনারা অবাক হয়ে যাবেন সন্ধের আগেই পূজারীরা দেবো তার জন্য জল মিষ্টি চন্দন কাঠের পালঙ্ক রাধার জন্য আয়না ও সিঙ্গারের ব্যবস্থা করে দিয়ে যান তারপরে তালা দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয় এর দরজা কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো মন্দিরের দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গেই পরেরদিন ভোরে দেখা যায় বিছানা সব এলোমেলো এবং সবকিছুই জানো আধখাওয়া কাকে যেন এখানে বিশ্রাম নিয়ে গেছে।
কিন্তু আপনাদের মনে নিশ্চই কৌতূহল জাগবে যে নিধীবন এত নিষেধের শর্তেও গেলে কি হবে? কেনো বা বারণ করা হয়? স্থানীয়রা বলেন এখানে নিয়ম অমান্য করে কেউ যদি ঢোকে তাহলে তার নিস্তার নেই। অবিশ্বাসী কেও কেও লুকিয়ে থেকে গেছে নিধিবনে। কিন্তু পরেরদিন অদ্ভুত ভাবে তাদের পাওয়া গেছে কেও বোবা কেও কালা বা উন্মাদ দশায়। রাতের অন্ধকার কি দেখেছিল সেই জানার সুযোগ মেলেনি কারোর। কিন্তু একজন ছাড়া। তিনি হলেন কলকাতা এক বাঙালি ভক্ত। কৌতূহলবশত তিনি নিধিবন কি হয় রাত্রে বেলায় তা দেখতে একদিন লুকিয়ে ছিলেন এবং পরের দিন সকালে যখন পূজারীরা দরজা খোল তখন সেই ভক্তকে অচৈতন্য অবস্থায় ও দেখতে পায় এবং সে অসুস্থ হয়ে যায় কিন্তু কেউ বুঝতে পারছিল না তার রোগটা কোথায় তিনি হারিয়ে ফেলেছিলেন বাকশক্তি একদিন গঙ্গার ধারে তিনি বসে ছিলেন এবং তার গুরুজি তার সাথে দেখা করতে এসেছিল সেই শিষ্য তার গুরুজীর কাছে একটি কাগজ ও কলম চাই এবং তিনি তাকে চলে যেতে বলেন। গুরুজি স্নান সেরে ফিরে আসে দেখেন যে তার দেহে প্রাণ নাই। আছে শুধু একটি চিঠি পরে। সেখানে লেখা ছিল গুরুজি আমি আপনার কথা বিশ্বাস করিনি কিন্তু আপনি বলতেন নিধিবনের ভগবান শ্রীকৃষ্ণ রাসলীলা করতে আসেন কিন্তু আমি বিশ্বাস করতে পারিনি তাই কৌতূহলবশত আমি গিয়েছিলাম এবং অলৌকিক রূপের সাক্ষী থেকেছি। আমার আর কিছু চাওয়ার নেই। সেই চিঠি বাংলায় লেখা এবং সেটি আজও মথুরার সরকারি সংগ্রহশালায় যত্ন করে রাখা আছে যে কেউ চাইলে পরে আসতে পারেন।