রাজিয়া শাসনকালের ব্যর্থতা সমূহ আলোচনা
ইলতুৎমিশের শেষ ইচ্ছাপত্র অনুযায়ী রাজিয়া সুলতানি সাম্রাজ্ঞী পদে অধিষ্ঠিত হতে পারেননি । তৎকালীন অভিজাত ও উলেমারা একজন মহিলাকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে দেখতে প্রস্তুত ছিল না তাই তারা প্রবাদপ্রতিম সুলতান ইলতুৎমিশের ইচ্ছাকে মর্যাদা না দিয়ে তার অযোগ্য ও অপদার্থ পুত্র রুক উদ্দিন ফিরোজকে সুলতানি পদে অধিষ্ঠিত করেন । কিন্তু কয়েক মাস যেতে না যেতেই রুকউদ্দিনের ফিরোজকে অধিষ্ঠিত করেন। কিন্তু কয়েক মাস যেতে না যেতেই রুক উদ্দিনের শাসন পরিচালনা সুলতানি প্রশাসনে ডেকে আনে চরম নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা । তাই একপ্রকার অনিচ্ছার সত্বেও অভিজাত ও উলেমারা শেষ পর্যন্ত রুকউদ্দিনকে সরিয়ে রাজিয়াকে সাম্রাজ্ঞী পদে মেনে নেন । দিল্লির এই অভিজাত ও ও উলেমা শ্রেণীর অনিচ্ছার মধ্যে রাজিয়ার ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায় । কেননা পরবর্তীকালে রাজিয়া প্রশাসনিক যোগ্যতার পরিচয় দিলেও উলেমা ও অভিজাত শ্রেণী তার বিরোধিতা করতে থাকে। এই বিরোধিতায় শেষ পর্যন্ত রাজিয়ার পতনের ডেকে আনে। শুরু থেকেই তুর্কি অভিজাত ও উলামাদের বাদ দিয়ে প্রশাসন পরিচালনা চেষ্টা করেন। এই জন্য তিনি প্রশাসনে অতুর্কি তাজিকদের নিয়োগ করেন । নিজের হাতে সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করে তুর্কি আমীরদের প্রশাসনে নিষ্ক্রিয় করে দেন। উলেমাদের মধ্যেও তিনি একটি বিকল্প অনুগত গোষ্ঠী তৈরি করার চেষ্টা করেন। জনৈক হাবসি ইয়াকুব খাঁ কে প্রশাসনের সর্বোচ্চ দায়িত্ব দেন। অনেক ঐতিহাসিক অভিযোগ করেন যে হাবসি অনুচর ইয়াকুব এর সাথে রাজিয়ার অবাধ মেলামেশা তুর্কি অভিজাত আত্মমর্যাদায় আঘাত হানে। তাই তারা রাজিয়া বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত হন আলতুনিয়া, আলতেগিন, কবির খাঁ, প্রমূখ তুর্কি প্রভাবশালী আমিরা শেষ পর্যন্ত রাজিয়ার আচরণে বীতশ্রদ্ধ হয়ে চক্রান্তে লিপ্ত হন। সম্মিলিত এই চক্রান্তের রাজিয়া ভাতিন্ডা দুর্গে নিহত হন ।
এই কথা সত্য যে, রাজিয়া প্রশাসনে অসাধারণ যোগ্যতা ও ক্ষমতার পরিচয় দেন কিন্তু পুরুষের পোশাক পরিচালনা অশ্বারোহণ, অশ্বি চালনা, হাতির পিঠে চেপে বিভিন্ন পরিভ্রমণ প্রভৃতি ঘটনাবলী সাধারণ মানুষ খুশিতে মেনে নিতে পারেননি। মধ্যযুগের ইতিহাসে একজন মহিলার এহেন আচরণ জনগণের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে । কোন কোন ঐতিহাসিক মনে করেন জনগণ তার প্রশাসনকে উদারচিত্তে অনুমোদন দিতে পারেননি । তাই দিন যত এগোতে থাকে ততই রাজিয়ার জনসমর্থনে ভাটা পড়ে পরিস্থিতির এই সুযোগকে পূর্ণ মাত্রায় ব্যবহার করেন । তুর্কি অভিজাত ও উলেমা শ্রেণি এই কারণে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে রাজিয়ার শোচনীয় পরাজয় হয়।
রাজিয়ার ব্যর্থতায় আরেকটি বড় দিক হলো যুব মানসিকতা। কোন কোন লেখক মনে করেন যে শাসন পরিচালনা করবে নারী ? এই কথা ভাবা তখন অকল্পনীয় ছিল ।কোরআন, শরীফ, শরীয়ত ও হাদিসে একজন মহিলা শাসন পরিচালনা তেমনভাবে অনুমোদিত দিতে হয়নি । তাই শুরু থেকেই উলামারা জনমতকে রাজিয়ার বিরোধী করে তোলে। ঠিক এই সময় রাজিয়া পুরুষ সুলভ শাসন পরিচালনা অশ্বারোহণ প্রভৃতি বিষয়ে উলেমা শ্রেণীর শরীয়ত বিরোধী বলে ঘোষণা করেন। তারা রাজিয়া কে ইসলামবিরোধী কুণ্ঠিত হননি। তাই রাজিয়ার জনসমর্থনের আলগা হয়ে যায়। এইভাবে ঘরে-বাইরে শত্রু পরিবেষ্টিত রাজিয়া ১২৪০ খীঃ অভিযোগের চক্রান্তে নিহত হন। ঐতিহাসিক হাবিবুল্লাহ লিখেছেন,” inspite of having all the good qualities of a rular Razia was a transcendent failure”