পৃথিবীতে আরাধ্য তিনি। যীশু খ্রিস্ট নামেই পূজিত হন। কিন্ত যীশু খ্রিস্টের আসল নাম কী, এবার তার খোলসা করলেন ভাষা ও ধ্বনি বিশেষজ্ঞরা। জানালেন যীশু খ্রিস্টের আসল নাম সম্ভবত ইয়েশিু নাজারিন, (Yeshu Nazareen) ছিল। New York Post-এ ভাষা এবং ধ্বনি বিশেষজ্ঞদের গবেষণার একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, আর তাতেই এই দাবি করা হয়েছে। খ্রিস্ট-ধর্মাবলম্বীদের কাছে তো বটেই, যীশু খ্রিস্ট অন্যদের কাছেও আরাধ্য। তবে তাঁর নাম ঘিরে বিতর্ক বিতর্ক ছিল বরাবর।যীশু খ্রিস্ট এবং তাঁর অনুগামীরা রোম সাম্রাজ্যের জুডেয়ায় থাকতেন। সেই সময় ইংরেজির প্রচলন ঘটেনি সেখানে। যীশু এবং তাঁর অনুগামীরা আরামাইক ভাষায় কথা বলতেন বলে জানা যায়।
গবেষকরা জানিয়েছেন, যীশুর নামের সঙ্গে আরামাইক ভাষার সংযোগ রয়েছে। অধুনা ইজরায়েলের উত্তর এবং লেবাননের দক্ষিণের গালিলী থেকে সেই সময়কার যে সমস্ত নথি পাওয়া যায়, সেখানে আরামাইক ভাষাতেই কথা বলার চল ছিল। গালিলীর নাজরথেই সম্ভবত বেড়ে ওঠা যীশুর। এমনকি গ্রিক ভাষায় অনুদিত গসপেলেও ‘ঈশ্বরের সন্তান’ আরামাইকে কথা বলতেন বলে উল্লেখ রয়েছে।গবেষকদের মতে, সেই সময় ‘J’ উচ্চারণ করা হতো না। যীশু খ্রিস্টের মৃত্যুর প্রায় ১৫০০ বছর পর ‘J’-র উচ্চারণ শুরু হয়, সেই মতো লেখাও শুরু হয়। সেখান থেকেই Yeshu, Jesus বা যীশু হয়ে যায়। Christ বা খ্রিস্ট কোনও পদবী নয়। বরং ‘ঈশ্বরের নামে অভিষিক্ত ব্যক্তি’ বোঝাতেই ওই শব্দটির আমদানি। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, Yeshua বা Yeshu নামই ব্যবহার করতেন যীশু। ওই সময় গালিলী-তে ওই নামের প্রচলনও ছিল। যীশুর পুরো নাম ছিল Yeshu Nazareen.
‘বাইবেল’-এ আগাগোড়া যীশুকে ‘Jesus of Nazareth’, প্রকারান্তরে ‘Jesus of Nazarene’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গবেষকদের মতে, জন্মস্থানের নিরিখেই যীশুকে ওই নামে উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা যায়। ক্রোয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ জাগরিবের ইতিহাসবিদ মার্কো মারিনা জানিয়েছেন, প্রাচীন কালে পদবী ব্যবহারের চল ছিল না। বরং জাতি, জন্মস্থান এবং মা-বাবার পরিচয় নামের পাশে জুড়ে নেওয়া হতো। কিন্তু Yeshu Nazarene কী করে Jesus of Nazareth হলেন? গবেষকদের মতে উচ্চারণের ফারাকের জেরে এমনটা হয়েছে। যীশুর নাম ছিল আরামাইকে।
কিন্তু গ্রিক ভাষায় তা উচ্চারণের জন্য প্রয়োজনীয় শব্দ বা ধ্বনি ছিল না। ফলে প্রথমে Yeshu হয়ে যায় Iesous. আবার নিউ টেস্টামেন্ট যখন লাতিন ভাষায় অনুদিত হয়, Iesous হয়ে যায় Iesus. ১৭ শতকে ‘J’-র উচ্চারণ শুরু হয়। সেই অনুযায়ী Iesus হয়ে যায় আধুনিক নাম Jesus. শুধু নামেই চমক নেই। যীশু খ্রিস্টের আসল জন্মদিনও ২৫ ডিসেম্বর নয়। চার শতকে পোপ প্রথম জুলিয়াস ২৫ ডিসেম্বর দিনটিকে যীশুর জন্মদিন হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেন। কারণ প্রাচীন রোমে ওই একই দিনে Pagan Saturnalia (রোমের শনিদেবতা) Festival পালিত হতো।