বাড়বে তেলের দাম?সরাসরি ইরানের তেল পরিশোধনাগারের হামলা ইসরাইলে, যুদ্ধের মূল্য চোকাতে হবে আমাকেও আপনাকেও

ভয়ঙ্কর মোড় নিচ্ছে ইজরায়েল-ইরানের সংঘাত। একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইরানের রাজধানী তেহরানের একটি তৈল শোধনাগারে বিস্ফোরণ ঘটাল ইজরায়েল। এবার সরাসরি আঘাত ইরানের তৈল ভাণ্ডারে। জানা গিয়েছে, ইজরায়েলের সেনা বাহিনী আইডিএফ নিশানা করে তেহরানের তৈল পরিশোধনাগার বা ওয়েল রিফাইনারিগুলিতে হামলা চালিয়েছে। জ্বলছে বিশ্বের বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস ফিল্ড সাউথ পার্স-ও। সংঘাতের এই আঁচ এবার মেটাতে হবে গোটা বিশ্বকে।

হু হু চড়বে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম, যা সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলবে। এমনটাই আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। সংবাদসংস্থা রয়টার্স একটি রিপোর্টে জানিয়েছে, তেহরানের শাহরান তেল ডিপোতে ইসরায়েলি হামলা চালিয়েছে। তবে, পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু শনিবারই ইরানকে হুঁশিয়ারি দেন, বলেন যে হামলা আরও বাড়বে। “অপারেশন রাইজিং লায়ন ” শুরু করেছে ইজরায়েল। প্রথমেই নিশানা করা হয়েছে ইরানের নাটানাজ়, ইসফাহান, তেহরানের পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রগুলিকে। অন্তত ৬ জন পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয়েছে। প্রাণ হারিয়েছেন ইরানের সেনা কম্যান্ডার সহ একাধিক শীর্ষকর্তার। এর আগে, ইরানের দক্ষিণে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি অবকাঠামো দক্ষিণ পার্স গ্যাসক্ষেত্রে বিমান হামলা চালায় ইজরায়েল। এ ঘটনার পর গ্যাসক্ষেত্র এলাকায় ব্যাপক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে সেখানে।

কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রত্যাঘাত করে ইরান। ২০০-রও বেশি ব্যালেস্টিক মিসাইল ও ড্রোন দিয়ে ইজরায়েলে হামলা চালায়। তেহরান হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, ইজরায়েল যদি এরপরও হামলা চালিয়ে যায়, তবে ফল ভয়ঙ্কর হবে।

যদিও ইজরায়েল থামেনি সেই হুঁশিয়ারিতে। প্রতিনিয়ত হামলা চালায় ইরানে। একদিকে যেখানে ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেখানেই ইজরায়েলের আয়রন ডোম ভেদ করে ব্যালেস্টিক মিসাইল ছুঁড়ছে ইরান। ধ্বংস হচ্ছে ইজরায়েলের বাড়িঘর। নেতানিয়াহুর দাবি, ইরান ইচ্ছাকৃতভাবে সাধারণ মানুষের উপরে হামলা করছে।

এবার আইডিএফ নিশানা করল তেহরানের তৈল পরিশোধনাগারগুলিকে। তেহরান সহ একাধিক জায়গায় ওয়েল রিফাইনারিগুলিতে হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল। জ্বলছে বিশ্বের বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস ফিল্ড সাউথ পার্স-ও।

যেহেতু ইরান বিশ্বের অন্যতম তেল সরবরাহকারী দেশ, তাই পরিশোধনাগারগুলিতে হামলা ব্যহত করবে তেল সরবরাহ। সঙ্কট দেখা দিতেই হু হু করে চড়বে তেলের দাম। সঙ্গে দাম বাড়বে আনুসাঙ্গিক জিনিসেরও। ইতিমধ্যেই অপরিশোধিত তেল ও সোনার দাম চড়তে শুরু করেছে। সংঘাত আরও কয়েকদিন চললে গোটা বিশ্ব সঙ্কটের মুখে পড়তে পারে।

ইরান হুঙ্কার দিয়েছে, যদি কোনও দেশ ইজরায়েলকে সাহায্য করে বা বিদেশি মিলিটারি বেস ব্যবহার করে ইজরায়েল, তাহলে সেটাও ধ্বংস করে দেওয়া হবে। আমেরিকা, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সকে সরাসরি হুমকি দিয়েছে ইরান। এখনই সতর্ক হতে বলেছে। আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু অস্ত্র নিয়ে যে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল, তাও বাতিল করে দিয়েছেন ইরানের সুপ্রিম লিডার আলি খোমেইনি।

সময় যত এগোচ্ছে ততই ঘনিয়ে আসছে সংকট। এদিকে, ইরানের মাটিতে ইজরায়েলের হামলায় পশ্চিম এশিয়ার ফের বেজে উঠেছে যুদ্ধের দামামা। যার জেরে সিঁদুরে মেঘ দেখছে ভারত। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এর জেরে বিশ্ববাজারে ব্যাপকভাবে বাড়তে পারে জ্বালানি তেলের দাম। যুদ্ধের জেরে বিশ্বের বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম শনিবার ৬ ডলার বেড়ে পৌঁছে গিয়েছে ৭৮ ডলার প্রতি ব্যারেল। এই যুদ্ধ আগামী দিনে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে বাণিজ্য। যার প্রভাব সরাসরি পড়বে ভারতের উপর।

ইরান বিশ্বের অন্যতম তেল রপ্তানিকারক দেশ হিসাবে পরিচিত । ভারত-সহ বিভিন্ন দেশে এখান থেকেই, তেল সরবরাহ করা হয়। আর সেক্ষেত্রে মূল পথ হিসেবেই ব্যবহার করা হয় হরমুজ প্রণালীকে। এই অঞ্চল দিয়ে বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের প্রায় ২০ শতাংশ সরবরাহ করা হয় । ইজরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরেই , এই অঞ্চলে জাহাজ চলাচল বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। এর জেরে ভারতে তেল সরবরাহ বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল । ভারতের আমদানি করা তেলের দুই-তৃতীয়াংশই এখান দিয়েই আসে। তাই সরবরাহে সমস্যা দেখা দিলে দেশজুড়ে ফের বাড়তে পারে তেলের দাম। গত দু’দিনেই তেলের দাম বেড়েছে ১১ শতাংশ। সংঘাত চলতে থাকলে ব্রেন্টের অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল পিছু ১০০-১২০ ডলার হতে পারে। এর ফলে যুদ্ধে মূল্য চোকাতে হবে সাধারণ মানুষকে ।

Leave a comment