এক নাটকীয় পট পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেল আল্লু অর্জুন গ্রেফতারে । সকাল থেকেই আল্লু অর্জুন জ্বরে কাবু গোটা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। সকালে থেকে অভিনেতার জীবন যাত্রা গেল এরকম -এলাম, দেখলাম, চলে গেলাম । সকালে হলেন গ্রেফতার, দুপুরে পেলেন ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজত। আর সন্ধ্যায় পেয়ে গেলেন জামিনে মুক্তি। এদিন নমপল্লী আদালত ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়ে ছিল আল্লু অর্জুনকে এবং ঠিক সেই সময় চরম ভাবে চাপের মুখে পড়েন দক্ষিণী সুপারস্টার আল্লু অর্জুন। এই মাসের শুরুতে ‘পুষ্পা ২: দ্য রুল’-এর প্রিমিয়ারের দিন সিনেমা মুক্তিকে ঘিরে এবং অভিনেতাকে এক ঝলক দেখার জন্যে যে হুড়োহুড়ি পড়েছিল প্রেক্ষাগৃহে, তাতে পদপিষ্ট হয়ে এক মহিলা প্রাণ হারান এবং এদিন সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই অভিনেতাকে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এদিন তাঁকে গ্রেফতারের পর মেডিক্যাল চেক আপ করিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় নমপল্লী আদালতে। আর সেখানে তাঁর পক্ষের আইনজীবী জামিনের আবেদন জানান। কিন্তু তিনি সোমবার পর্যন্ত গ্রেফতারি স্থগিত চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। তাঁর আবেদনকে মান্যতা দেয়নি আদালত। তার বদলে ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয় তাকে ।
কোর্ট অর্ডার হাতে পেতেই অভিনেতার আইনজীবী দৌড়ান হাইকোর্টে। এবং নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। আর তার কিছুক্ষণের মধ্যেই তেলেঙ্গানা হাইকোর্ট স্বস্তির খবর শোনায়। অভিনেতার জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত।
এক্ষেত্রে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, ‘তাঁর জীবন ও স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে। তাঁকে তাঁর মৌলিক অধিকার থেকে কোনও ভাবেই বঞ্চিত করা যায়না। ওই মহিলার মৃত্যু অবশ্যই বেদনাদায়ক। কিন্তু তাঁর জন্যে যে কাউকে দোষারোপ করা যায় না’।
এদিন আদালত চত্বরে পুলিশের একটি বিষয় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অভিনেতা। তিনি সরাসরি ভাষায় বলেন, পুলিশ তাঁর বাড়িতে এসে সটান তাঁর বেডরুমে ঢুকে যায়। যাতে তাঁদের প্রাইভেসি নষ্ট হয়েছে।
এদিন আল্লু অর্জুন নিম্ন আদালতে বলেন, “স্যার, আপনারা কোনও কিছুকেই সম্মান করেননি। আমি আপনাদেরকে বলেছিলাম যে আমি আমার পোশাক পরিবর্তন করতে চাই এবং এর জন্যে আমার সাথে একজনকে পাঠান। কিন্তু আপনারা কোনও কিছু না শুনে বেডরুমের ভিতরে প্রবেশ করে আসেন। এটা কিন্তু আপনারা ঠিক করেননি”। যদিও অভিনেতার এতো বড় অভিযোগকে এদিন মান্যতা দেয়নি আদালত।
এদিন অভিনেতার গ্রেফতারের পরপরই যে ভিডিওগুলি প্রকাশিত হয়, তাতে দেখা যায়, তিনি পুলিশ স্টেশনে বসে কফি খাচ্ছেন এবং পরে পুলিশ তাকে নিয়ে যাচ্ছে। তাঁর স্ত্রী আল্লু স্নেহা রেড্ডি, ভাই আল্লু সিরিশ এবং বাবা আল্লু অরবিন্দকেও তাঁর সঙ্গে দেখা গেছে। এদিন আল্লু অর্জুন কোর্ট চত্বরে যাওয়ার সময় তাঁর স্ত্রী স্নেহা রেড্ডিকে গালে চুম্বন করে সান্তনা দিয়ে আদালত কক্ষের ভিতরে চলে যান, যে ভিডিও মুহুর্তে ভাইরাল হয়ে ওঠে।
এদিকে, হায়দ্রাবাদ পুলিশ ঘটনার দিনের একটি চিঠিকে প্রকাশ্যে এনেছে। সন্ধ্যা থিয়েটারের ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে ২ শে ডিসেম্বর পুলিশের কাছে লেখা সেই চিঠি। যেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে অভিনেতা আল্লু অর্জুন, রশ্মিকা মান্দানা, এছাড়াও চলচ্চিত্রে তার সহ-অভিনেতা – এবং অন্যরা প্রিমিয়ারে উপস্থিত থাকবেন এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার অনুরোধ করা হচ্ছে।
অথচ তারপরও ছিল না নিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। তাহলে কি পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন থাকছে। আপাতত, সুপারস্টারের মুক্তির আনন্দেই ভাসতে চাইছে তাঁর অনুরাগীরা। সকাল থেকে বহু ঝড় সামলেছেন তাঁদের প্রিয় অভিনেতা। আগামী দিনে ঐ ধরনের ঘটনা না ঘটে তার জন্যে সতর্ক দৃষ্টি দেবে প্রশাসন । আপাতত তিনি তার ছবির প্রচার নিয়ে বেশ চাপেই রয়েছেন ।