ডেলাইট সেভিং টাইম (DST) বা দিবালোক সংরক্ষণ সময় ২০২৫ সালের কখন শুরু ও কখন শেষ?

নিঃসন্দেহে, ডেলাইট সেভিং টাইম (DST) বা দিবালোক সংরক্ষণ সময় বিশ্বের যে সকল অঞ্চলে পালিত হয়, সেখানকার মানুষের জন্য প্রতি বছর একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়। বিশেষ করে যখন ঘড়ির কাঁটা “বসন্তে এগিয়ে” (spring forward) যায় বা “শরতে পিছিয়ে” (fall back) আসে, তখন সময়সূচি ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসে।

২০২৫ সালের ডেলাইট সেভিং টাইম বা DST-এর শুরু এবং শেষের তারিখ সম্পর্কিত তথ্য ও এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন নিচে তুলে ধরা হলো:

⏳ ২০২৫ সালের ডেলাইট সেভিং টাইম: কখন শুরু ও কখন শেষ?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (United States) এবং কানাডাসহ (Canada) বিশ্বের বেশিরভাগ অঞ্চলে যে ডেলাইট সেভিং টাইম (DST) অনুসরণ করা হয়, তার নির্দিষ্ট সময়সূচি হলো:

ইভেন্ট (Event)তারিখ (Date)সময় (Time)পরিবর্তন (Change)প্রচলিত নাম (Mnemonic)
শুরু (Spring Forward)রবিবার, ৯ মার্চ, ২০২৫স্থানীয় সময় রাত ২:০০ টায়ঘড়ি ১ ঘণ্টা এগিয়ে যাবে (২:০০ $\rightarrow$ ৩:০০)Spring Forward (বসন্তে এগিয়ে দাও)
শেষ (Fall Back)রবিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৫স্থানীয় সময় রাত ২:০০ টায়ঘড়ি ১ ঘণ্টা পিছিয়ে যাবে (২:০০ $\rightarrow$ ১:০০)Fall Back (শরতে পিছিয়ে দাও)

২০২৫ সালের ডেলাইট সেভিং টাইম (DST) শুরু হয়েছিল ৯ মার্চ, রবিবার এবং শেষ হবে ২ নভেম্বর, রবিবার।


☀️ “Spring Forward”: ৯ মার্চের পর জীবনের পরিবর্তন

২০২৫ সালের ৯ মার্চ, রবিবার ডেলাইট সেভিং টাইম (DST) শুরু হয়। এই দিনটিকে “Spring Forward” বলা হয়, কারণ এই সময়ে ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা এগিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলস্বরূপ:

  • সন্ধ্যার আলো বৃদ্ধি: এই পরিবর্তনের মূল উদ্দেশ্য হলো দিনের আলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করা। ঘড়ি এগিয়ে দেওয়ার ফলে সন্ধ্যায় এক ঘণ্টা বেশি সূর্যালোক পাওয়া যায়। এর ফলে মানুষ কাজ শেষে বেশি সময় বাইরে কাটাতে পারে, যা অবসর ও বিনোদনের জন্য উপকারী।
  • সকালের অন্ধকার: ঘড়ি এগিয়ে যাওয়ায় সকাল এক ঘণ্টা দেরিতে শুরু হয়। অর্থাৎ, সূর্যোদয় এক ঘণ্টা দেরিতে হয়। এর ফলে সকালে ঘুম থেকে ওঠা বা কাজে যাওয়া অনেকের কাছে কিছুটা কঠিন মনে হতে পারে, কারণ তখন পরিবেশ কিছুটা অন্ধকার থাকে।
  • এক ঘণ্টা ঘুমের ক্ষতি: এই পরিবর্তনের ফলে, প্রযুক্তিগতভাবে, যে অঞ্চলে DST পালিত হয়, সেখানকার মানুষ এক ঘণ্টা কম ঘুমায়

🍂 “Fall Back”: ২ নভেম্বরের পর স্বাভাবিক সময়ে ফেরা

২০২৫ সালের ২ নভেম্বর, রবিবার ডেলাইট সেভিং টাইম (DST) শেষ হবে। এই দিনটিকে “Fall Back” বলা হয়, কারণ এই সময়ে ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা পিছিয়ে দিয়ে স্ট্যান্ডার্ড টাইমে (Standard Time) ফিরিয়ে আনা হয়। এর ফলস্বরূপ:

  • সকালের আলো বৃদ্ধি: ঘড়ি পিছিয়ে যাওয়ায় সকালে এক ঘণ্টা বেশি সূর্যালোক পাওয়া যায়। শীতের মাসগুলোতে যখন দিন ছোট হয়ে আসে, তখন সকালে কাজ শুরু করার সময় কিছুটা দিনের আলো পাওয়া যায়।
  • সন্ধ্যার অন্ধকার: এর ফলস্বরূপ সন্ধ্যা এক ঘণ্টা আগে নেমে আসে। অর্থাৎ, বিকেল বা সন্ধ্যার শুরুর দিকেই অন্ধকার হয়ে যায়।
  • এক ঘণ্টা ঘুমের লাভ: এই পরিবর্তনের ফলে, যে অঞ্চলে DST পালিত হয়, সেখানকার মানুষ এক ঘণ্টা বেশি ঘুমানোর সুযোগ পায়। এটি সাধারণত মানুষের শরীরের জন্য “Spring Forward”-এর চেয়ে কম চাপ সৃষ্টি করে।

🤔 ডেলাইট সেভিং টাইম কেন পালিত হয়?

DST প্রথম শুরু হয়েছিল মূলত শক্তি সাশ্রয় করার উদ্দেশ্যে। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের (Benjamin Franklin) মতো ব্যক্তিত্বরা প্রথমে এই ধারণা দিয়েছিলেন, এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানি জ্বালানি বাঁচানোর জন্য এটি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে।

  • সন্ধ্যায় বেশি সময় আলো থাকার কারণে মানুষ সন্ধ্যায় কৃত্রিম আলোর ব্যবহার কম করে, যা বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে।
  • এই সময়ে মানুষ বাইরে বেশি সময় কাটায়, যা অর্থনৈতিক কার্যকলাপ (যেমন রিটেইল ব্যবসা) এবং আউটডোর বিনোদনের জন্য উপকারী।

তবে বর্তমানে DST-এর উপযোগিতা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে এটি আধুনিক সময়ে উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তি সাশ্রয় করে না। উপরন্তু, প্রতি ছয় মাস অন্তর সময় পরিবর্তনের কারণে মানুষের সার্কাডিয়ান রিদম (Circadian Rhythm) বা দৈহিক ঘড়িতে ব্যাঘাত ঘটে, যার ফলে ঘুম ও স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এক গবেষণায় দেখা যায়, এই সময় পরিবর্তনের পর গাড়ি দুর্ঘটনা ও হার্ট অ্যাটাকের মতো ঘটনা সামান্য পরিমাণে হলেও বেড়ে যেতে পারে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই (Hawaii) এবং অ্যারিজোনার (Arizona) মতো কিছু রাজ্য DST অনুসরণ করে না। এছাড়া, অনেক দেশ এখন DST স্থায়ীভাবে বাতিল করার কথা ভাবছে বা প্রস্তাব দিয়েছে। তবে ২০২৫ সালে বেশিরভাগ অঞ্চলের জন্য এই দ্বিবার্ষিক সময় পরিবর্তন মেনে চলতে হবে।

আপনি কি এখন জানতে চান কোন কোন দেশে ডেলাইট সেভিং টাইম পালিত হয় না?

অবশ্যই, ডেলাইট সেভিং টাইম (DST) বা দিবালোক সংরক্ষণ সময় বিশ্বের সমস্ত দেশে পালিত হয় না। প্রকৃতপক্ষে, বিশ্বের অধিকাংশ দেশই এই সময় পরিবর্তন পদ্ধতি অনুসরণ করে না। এটি প্রধানত উত্তর গোলার্ধের উচ্চ অক্ষাংশের দেশগুলিতে (যেমন উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের কিছু অংশ) বেশি প্রচলিত।

নিচে সেসব দেশ ও অঞ্চলের তালিকা দেওয়া হলো, যেখানে ২০২৫ সালেও ডেলাইট সেভিং টাইম পালন করা হয় না এবং তারা বছরজুড়ে স্ট্যান্ডার্ড টাইম (Standard Time) বজায় রাখে:

🚫 যেসকল দেশে ডেলাইট সেভিং টাইম (DST) পালিত হয় না

মহাদেশ ও অঞ্চলভিত্তিক প্রধান প্রধান দেশ ও অঞ্চলের তালিকা নিচে দেওয়া হলো:

১. এশিয়া (Asia)

এশিয়া মহাদেশের প্রায় সমস্ত দেশই DST পালন করে না। এখানকার দেশগুলো তাদের স্ট্যান্ডার্ড টাইম সারা বছর ধরে বজায় রাখে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দেশ হলো:

  • ভারত (India): ভারত স্ট্যান্ডার্ড টাইম (IST) অনুসরণ করে এবং DST পালন করে না।
  • বাংলাদেশ (Bangladesh): বাংলাদেশ অতীতে একসময় DST চালু করলেও বর্তমানে এটি পালন করে না।
  • চীন (China): বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এই দেশটি DST পালন করে না।
  • জাপান (Japan)
  • দক্ষিণ কোরিয়া (South Korea)
  • সৌদি আরব (Saudi Arabia)
  • মালয়েশিয়া (Malaysia)
  • থাইল্যান্ড (Thailand)
  • ফিলিপাইন (Philippines)
  • শ্রীলঙ্কা (Sri Lanka)

২. আফ্রিকা (Africa)

আফ্রিকা মহাদেশের বেশিরভাগ দেশ নিরক্ষরেখার কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায় সেখানে দিনের আলোর পরিবর্তন তুলনামূলকভাবে কম হয়, তাই তারা DST পালন করে না।

  • দক্ষিণ আফ্রিকা (South Africa)
  • নাইজেরিয়া (Nigeria)
  • মিশর (Egypt): মিশর অতীতে DST চালু করলেও বর্তমানে তারা তা বন্ধ করেছে।
  • কঙ্গো (Congo)
  • কেনিয়া (Kenya)

৩. উত্তর আমেরিকা (North America)

উত্তর আমেরিকার বেশিরভাগ অঞ্চল DST পালন করলেও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার কিছু অঞ্চল এর ব্যতিক্রম:

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (USA)-এর যেসব অঞ্চলে DST পালিত হয় না:

  • অ্যারিজোনা (Arizona): এই রাজ্যের বেশিরভাগ অংশে DST পালিত হয় না (তবে নাভাজো নেশন-এ DST পালিত হয়)।
  • হাওয়াই (Hawaii)
  • মার্কিন অঞ্চলের মধ্যে: আমেরিকান সামোয়া (American Samoa), গুয়াম (Guam), পুয়ের্তো রিকো (Puerto Rico), ইউএস ভার্জিন আইল্যান্ডস (US Virgin Islands) এবং নর্দার্ন মারিয়ানা আইল্যান্ডস (Northern Mariana Islands)।

কানাডা (Canada)-এর যেসব অঞ্চলে DST পালিত হয় না (বা সারা বছর DST-এর কাছাকাছি সময় থাকে):

  • ইউকন (Yukon)
  • সাসকাচেওয়ানের (Saskatchewan) বেশিরভাগ অংশ।

৪. দক্ষিণ আমেরিকা (South America)

দক্ষিণ আমেরিকার বেশিরভাগ দেশ DST পালন করে না।

  • ব্রাজিল (Brazil): দেশটি ২০১৯ সাল থেকে DST বাতিল করেছে।
  • আর্জেন্টিনা (Argentina)
  • বলিভিয়া (Bolivia)
  • পেরু (Peru)

৫. ইউরোপ (Europe)

ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ DST পালন করে, তবে কয়েকটি দেশ ব্যতিক্রম:

  • আইসল্যান্ড (Iceland)
  • রাশিয়া (Russia)
  • বেলারুশ (Belarus)
  • তুরস্ক (Turkey)

কেন এই দেশগুলো DST পালন করে না?

DST সাধারণত সেইসব অঞ্চলে পালিত হয়, যেখানে গ্রীষ্মকালে দিনের আলোর সময় এবং শীতকালে রাতের সময়ের মধ্যে একটি সুস্পষ্ট বড় পার্থক্য থাকে (সাধারণত উচ্চ অক্ষাংশে)।

  1. নিরক্ষরেখার কাছাকাছি অবস্থান: নিরক্ষরেখার কাছাকাছি অবস্থিত দেশগুলোতে (যেমন ভারত, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার অধিকাংশ দেশ) সারা বছর ধরে দিনের আলোর সময় প্রায় একই থাকে। তাই সময় পরিবর্তন করে কোনো বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায় না।
  2. ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক কারণ: কিছু দেশ ঐতিহাসিকভাবে বা সামাজিকভাবে DST-এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি বা এর বিরোধিতা করেছে।
  3. স্বাস্থ্য ও অসুবিধা: অনেক দেশ, যেমন বাংলাদেশ (২০০৯ সালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য চালু করে বাতিল করা হয়েছিল), সময় পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট অসুবিধা (যেমন ডিজিটাল ডিভাইসগুলির সময়সূচিতে বিভ্রান্তি বা মানুষের স্বাস্থ্যগত ব্যাঘাত) এড়াতে DST বন্ধ করে দিয়েছে।

এই দেশগুলো বছরজুড়ে তাদের স্থানীয় স্ট্যান্ডার্ড টাইম অনুসরণ করে।

ডেলাইট সেভিং টাইম (DST) বাতিল করা বা এটিকে সারা বছরের জন্য স্থায়ী করা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এক তীব্র বিতর্ক চলছে। এই বিতর্কটি কেবল সময় পরিবর্তনের একটি সাধারণ বিষয় নয়, এটি অর্থনীতি, জনস্বাস্থ্য এবং জীবনযাত্রার মানের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।

আপনার অনুরোধে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে DST বাতিলের বিষয়ে বর্তমান রাজনৈতিক আলোচনা এবং এর সঙ্গে যুক্ত প্রধান বিল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো:


🏛️ মার্কিন রাজনীতিতে DST বাতিলের বিতর্ক (The US Political Debate)

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আইন অনুযায়ী, বেশিরভাগ রাজ্যকে বছরে দুবার ঘড়ির কাঁটা পরিবর্তন করতে হয়। যদিও রাজ্যগুলি চাইলে সারা বছর স্ট্যান্ডার্ড টাইম (Standard Time) অনুসরণ করতে পারে (যেমন অ্যারিজোনা এবং হাওয়াই), কিন্তু কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া তারা সারা বছর ডেলাইট সেভিং টাইম (DST) বা গ্রীষ্মকালীন সময় অনুসরণ করতে পারে না। এই নিয়মই বিতর্কের প্রধান কারণ।

১. মূল লক্ষ্য: “ঘড়ি পরিবর্তন বন্ধ করো” (Ditch the Switch)

মার্কিন নাগরিকদের একটি বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ (প্রায় ৮০ শতাংশ) বছরে দুবার ঘড়ি পরিবর্তনের এই প্রক্রিয়া বন্ধ করার পক্ষে। জনগণ মনে করে এই পরিবর্তন:

  • অসুবিধাজনক (Inconvenient): সময়সূচির পরিবর্তন দৈনন্দিন রুটিন এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্য ঝামেলা তৈরি করে।
  • স্বাস্থ্য ঝুঁকি: গবেষণায় দেখা গেছে, বিশেষ করে “Spring Forward” (মার্চ মাসে ঘড়ি এগিয়ে দেওয়া) মানুষের সার্কাডিয়ান রিদম (Circadian Rhythm) বা দৈহিক ঘড়িতে ব্যাঘাত ঘটায়, যা ঘুম, হৃদরোগ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি সামান্য হলেও বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • ব্যয়বহুল: সময় পরিবর্তনের ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সরকারের প্রশাসনিক কাজকর্মে জটিলতা সৃষ্টি হয়।

২. মূল রাজনৈতিক প্রস্তাব: সানশাইন প্রোটেকশন অ্যাক্ট (The Sunshine Protection Act)

DST বাতিল করার জন্য কংগ্রেসে বারবার একটি বিল উত্থাপন করা হয়, যার নাম “সানশাইন প্রোটেকশন অ্যাক্ট” (Sunshine Protection Act)

  • বিলে কী আছে: এই বিলের মূল লক্ষ্য হলো DST-কে সারা বছরের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী সময় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। অর্থাৎ, ঘড়ির কাঁটা মার্চ মাসে একবার এগিয়ে দেওয়ার পর তা আর কখনোই পেছানো হবে না।
  • ২০২২ সালের অগ্রগতি: ২০২২ সালে এই বিলটি মার্কিন সিনেটে ঐকমত্যের ভিত্তিতে (unanimously) পাস হয়েছিল। এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত ছিল। তবে, বিলটি হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে (House of Representatives) আর এগোতে পারেনি এবং সেখানে আটকে যায়।
  • ২০২৫ সালের অবস্থা: ২০২৫ সালেও নতুন করে এই বিলটি কংগ্রেসে উত্থাপিত হয়েছে। তবে, এটিকে চূড়ান্তভাবে আইনে পরিণত করার জন্য এটিকে সিনেট এবং হাউস উভয় কক্ষেই পাস হতে হবে এবং রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর পেতে হবে।

৩. দুটি পক্ষে বিভেদ: DST নাকি স্ট্যান্ডার্ড টাইম?

DST বাতিল করার বিষয়ে সবাই একমত হলেও, এটিকে স্থায়ীভাবে কোন সময় হিসেবে রাখা হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক এবং জনমত দ্বিধাবিভক্ত:

বিকল্পসমর্থকের যুক্তিবিরোধীর যুক্তি (স্থায়ী DST-এর ক্ষেত্রে)
স্থায়ী DST (Year-Round Daylight Saving Time)সন্ধ্যায় বেশি দিনের আলো পাওয়ায় বিনোদন, খেলাধুলা, রিটেইল ব্যবসা এবং বাইরে সময় কাটানোর সুযোগ বাড়ে। এই ধারণাটি অনেক উপকূলীয় রাজ্যের রাজনীতিবিদদের মধ্যে জনপ্রিয়।শীতকালে সকাল অত্যন্ত দেরিতে শুরু হবে। উদাহরণস্বরূপ, মধ্য-পশ্চিমের কিছু শহরে সকাল সকাল ৯টার পরেও অন্ধকার থাকতে পারে। এর ফলে স্কুলগামী শিশু এবং সকালে কাজে যাওয়া শ্রমিকদের নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়বে।
স্থায়ী স্ট্যান্ডার্ড টাইম (Year-Round Standard Time)এটি মানুষের দৈহিক ঘড়ি বা সার্কাডিয়ান রিদমের সঙ্গে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ। এর ফলে সকালে পর্যাপ্ত আলো পাওয়া যায়, যা স্বাস্থ্যগতভাবে ভালো বলে অনেক ঘুম বিশেষজ্ঞ মনে করেন। এই বিকল্পটি বাস্তবায়নে কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন নেই।সন্ধ্যা দ্রুত নেমে আসবে। গ্রীষ্মকালে কাজে বা স্কুল থেকে ফেরার পরই অন্ধকার নেমে আসায় আউটডোর কার্যকলাপ কমে যাবে, যা মানুষের মেজাজ ও জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে।

৪. ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থান

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের DST-এর ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক এজেন্ডার একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি ডিসেম্বরে ২০২৪ সালে জনসমক্ষে অঙ্গীকার করেন যে:

“রিপাবলিকান পার্টি ডেলাইট সেভিং টাইম বাতিল করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে… ডেলাইট সেভিং টাইম আমাদের জাতির জন্য অসুবিধাজনক এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল।”

অতীতে তিনি স্থায়ী DST-এর পক্ষে কথা বললেও, তাঁর সাম্প্রতিক অবস্থান “বাতিল” করার দিকে। তবে, এটি DST-এর দ্বিবার্ষিক পরিবর্তন বন্ধ করে স্থায়ীভাবে স্ট্যান্ডার্ড টাইম রাখবে নাকি স্থায়ী DST করবে, তা এখনও স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত নয়।


মোটকথা, জনগণ এবং রাজ্য সরকারগুলোর একটি বড় অংশ ঘড়ি পরিবর্তনের এই প্রক্রিয়া থেকে মুক্তি চায়। কিন্তু স্থায়ীভাবে কোন সময়কে বেছে নেওয়া হবে, সেই মৌলিক প্রশ্নেই মার্কিন রাজনীতিতে ঐক্যমত্যের অভাবের কারণে “সানশাইন প্রোটেকশন অ্যাক্ট”-এর ভাগ্য এখনও ঝুলে আছে।

Leave a comment