ডুয়ার্স ভ্রমণ এর দ্বিতীয় পর্ব পর্ব: মূর্তি থেকে সিসামারা

সকাল বেলায় চা এর সাথে মোমো খেয়ে নিলাম। এবং ফ্রেশ হয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম । আমাদের ড্রাইভার ঠিক সাড়ে আটটার মধ্যে এসে হাজির। আমাদেরও প্যাকিং শেষ করে হোটেল ছেড়ে গাড়িতে উঠে পড়লাম। আজকের গন্তব্য টা বেশ খানিকটা দূরে প্রায় 100 কিলোমিটারের মতো। রাস্তায় একেবারে ব্রেকফাস্ট আর লাঞ্চ সেরে নেব বলে ঠিক করলাম। আমরা গাড়িতে উঠে মূর্তি ছেড়ে রওনা দিলাম সিসামারা উদ্দেশ্যে। একে একে পার হতে লাগলাম তেন্দু জঙ্গল, নাগরাকাটা ডায়না ব্রিজ, বানারহাট ,দলগাঁও চা বাগান, ফালাকাটা, শালকুমার হাট হয়ে ডানদিকে নতুন পাড়া সেখান থেকে সিসা মারা নদীর বাঁধ ধরে এসে পৌছালাম এক হোমস্টে তে। মাঝে এক জায়গায় আমরা ব্রেকফাস্ট সেরে নিয়েছিলাম ব্রেকফাস্টে রুটি তরকারি খেয়েছিলাম আর সঙ্গে চাও পান করেছিলাম। এরপরে হোমস্টে তে ভালোভাবে স্নান করে ফ্রেস হয়ে নিলাম নদীর অপর পাড়ে দেখা যায় জলদাপাড়া জঙ্গল। নদীয়ার নতুনপাড়া জনবসতির মাঝে গাড়ি চলাচলের উপযোগী বাঁধ রয়েছে। ইচ্ছা হল সেই পথ ধরে হেঁটে দেখা স্থানীয় লোকেরা বলে এই সিসা মারা নদীর স্থানীয় নাম ছিল সসামারা ।স্থানীয় লোকেরা খরগোশকে বলতো সসা। তারা পাশের জঙ্গল থেকে খরগোশ দাঁড়িয়ে এনে তাদের নদীর জলে নামতে বাধ্য করে শিকার করতে বলেই এই নাম। শোনা যায় জঙ্গল থেকে বিভিন্ন জীব জন্তু জল খেতে আসে। হরিণ, শুকর জাতীয় প্রাণী দেখা মেলে। এই নদী তোর্সা থেকে উৎপন্ন হয়ে তোর্সা তেই মিশেছে। এখন ভাগ্য সহায় হলে দেখতে পাবেন হরিণ আর গন্ডারের জল খেতে আসে। তারপরে ভীষণ খিদে পাওয়ার জন্য আমরা দুপুরে ফিরে গেলাম হোম স্টে । খাওয়া-দাওয়া অবশ্য ভালোই হলো। কম খরচে তৃপ্তি করে মাছ ভাত খাওয়ার পরে বেরিয়ে পড়লাম সিসামারা রাইনো রিসোর্ট দেখতে। এখানে বেশ কয়েকটি গাছ বাড়ির মত কটেজ আছে। এখানে বিখ্যাত রিসোর্ট হলো রাইনো রিসোর্ট ।এখানে থাকতে গেলে আপনাকে আগে থেকে বুকিং করে আসতে হবে। না হলে জায়গা পাওয়া মুশকিল ।আমরা রাইনো রিসোর্ট ঘুরে গিয়ে ডান দিক দিয়ে হাঁটা শুরু করলাম। কিছুটা যাওয়ার পর দেখতে পেলাম জেলেরা মাছ ধরছে। এখানে নাকি বোরোলি মাছ খুব বেশি পাওয়া যায় ।আর জলে অনেক কাছিম রয়েছে যেগুলো এই মাছ বেশি পরিমাণে খেয়ে জেলেদের ক্ষতি করে। ধীরে ধীরে দেখলাম সন্ধ্যা নামছে। ফিরে চললাম হোমস্টে দিকে। হোমস্টে বারান্দা থেকে দেখতে পেলাম ময়ূরের দল জঙ্গল থেকে বের হয়ে নদীর চরে ঘুরে বেড়াচ্ছে । সন্ধ্যেবেলায় আমরা চা আর চিকেন পকরা খেলাম। এবং ঠিক করলাম যে কালকে যাব চিলাপাতার জঙ্গলে। খাওয়া-দাওয়া শেষে শুয়ে পড়লাম এবং পরেরদিন সকালবেলায় বেশ ভোরবেলাতেই উঠে পড়লাম।ভোরবেলাতে দেখতে পেলাম ময়ূরের দল উড়াউড়ি করছে নদীর চরে ।পথের দু’ধারে চা বাগান আর জঙ্গল এভাবেই কেটে গেল। এবং দুপুরে খাওয়া-দাওয়া সেরে রওনা দিলাম শালকুমার গেটের দিকে। এখান থেকেই শুরু হয় জঙ্গল সাফারি। জলদাপাড়া জঙ্গল সাফারি প্রধান গেট কিন্তু হল হলং। আরও একটি গেট আছে সেটা হলো এই শালকুমার। আপনারা চাইলে হলং থেকেও আসতে পারেন আবার এই শালকুমার ঘুরেও ঢুকতে পারেন । কিন্তু শালকুমার এর গাড়ি আগে বের হবার পার্মিশন পাওয়া যায় এবং পথে নজর মিনার থেকে বন্যজন্তু দেখার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। কারণ গাড়ি কম ও পর্যটক কম ফলে শান্ত পরিবেশে জন্তুদের অনেক সামনে থেকে দেখা যায় । আর সিসা মারার থেকে শালকুমার গেট মোটে পাঁচ কিলোমিটার । হোমস্টে মালিক আমাদের টিকিটের ব্যবস্থা করে রেখেছিল । গাড়ি আর গাইড এর টাকা জমা দিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম জঙ্গল সাফারি উদ্দেশ্যে । আমরা সেই মতো গাড়িতে উঠে পড়লাম এবং রওনা দিলাম চিলাপাতা উদ্দেশ্যে এবং দেখতে পেলাম এক দল হাতি ঘুরে বেড়াচ্ছে।সঙ্গে দেখতে পেলাম কিছু ময়ূর আর হরিণ। তারপরে এগিয়ে চললাম নজর মিনারের দিকে ।কিছুদুর যাওয়ার পর দেখতে পেলাম এক পাল বাই সন দাঁড়িয়ে আছে। মনের মত ছবি তুলে এখানে অনেকক্ষণ সময় কাটিয়ে উপস্থিত হলাম নজর মিনারে ।সামনে বিশাল সল্ট লেক । যেখানে জন্তুরা নুন চাটতে আসে । এবার আমরা অপেক্ষা করতে লাগলাম ।আর ও গাড়ি খানিকটা এসে হাজির হলো এবং যার ফলে জঙ্গলের কোলাহল বাড়তে লাগলো। অনেক পরে দেখতে পেলাম জঙ্গল থেকে হঠাৎ বেরিয়ে এলো এক শিং মাথায় নিয়ে এক গন্ডার। মনের মত করে ছবি তুলে ফিরবার পথ ধরলাম। ততক্ষণে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে ।সন্ধ্যার অন্ধকারে আর কিছুই দেখা গেল না। খাসির মাংস দিয়ে ভাত খেলাম জমিয়ে। পরদিন সকালে অপূর্ব সূর্যোদয় দেখলাম। এবং চা বাগানের আশেপাশে খানিকক্ষণ ঘোরাঘুরি করলাম ।এরপর আমাদের বাড়ি ফেরার পালা। বাড়ি ফেরার আগে আরেকবার ঠিক করেছিলাম দার্জিলিং ঘুরে যাবো দার্জেলিং হয়ে রঙ্গরুন ঘুরে দেখবো। উত্তরবঙ্গ এলেই কেমন যেন মনে হয় আবার যেন দার্জিলিং টা বেশ ঘুরেই যায় না হলে যেন মনে হয় কিছু অসম্পূর্ণ থেকে গেল তাই আবারও ঠিক করলাম যে ফিরবার পথে দার্জিলিং টা আরেকবার ঘুরে যাব । পরের পর্বে আপনাদের বলব আমাদের দার্জিলিং হয়ে রঙ্গরন হয়ে বাড়ি ফেরার গল্পঃ টা। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, সাথে থাকুন।

Leave a comment