এশিয়ায় দীর্ঘতম এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় দীর্ঘতম শিবলিঙ্গ হলো ভুষন্ডাশ্বর। লম্বায় ১২ ফুট,চওড়ায় ১৪ ফুট এই লিঙ্গ। একটি কালো গ্রানাইট থেকে এটি তৈরি। লিঙ্গটি তিনটি ভাগে বিভক্ত। উপরের অংশ গোলাকার, মাঝের অংশ অষ্টভুজাকৃতি।বাকি অংশ মাটিতে প্রোথিত। মন্দিরটি একেবারে গ্রামের( গ্রামের নাম ভোগারই ,জেলা বালেশ্বর ) মধ্যে অবস্থিত। সোমবার এবং শিব রাত্রি ব্যাতিত তাই ভীড়ও হয় নাম মাত্র। ভীড়ে স্থানীয়দের আধিক্যি বেশি। চাইলে আপনি পূজা দিতে পারেন আবার নাও পারেন। সেটা আপনার ইচ্ছা।
দীঘা থেকে ভুষন্ডাশ্বরের দূরত্ব ২৫ কিমি।
পৌরাণিক কাহিনী মতে,
স্থানীয় লোক কথা অনুযায়ী ত্রেতা যুগে দেবাদিদেব মহাদেব রাবনের তপস্যায় খুশি হয়ে এই লিঙ্গটি রাবনকে প্রদান করেন এবং শর্ত হিসেবে বলে দেন নিজ রাজ্যে না ফেরা পর্যন্ত এই লিঙ্গটি যেন কোথাও না রাখেন। রাবন লিঙ্গটি নিয়ে আপন পুষ্পকরথে চড়ে আকাশ পথে চললেন নিজ রাজ্যের উদ্দেশ্যে । দলবাজি, ক্ষমতার লড়াই কোথায় নেই তা সে স্বর্গ হোক বা মর্ত। অন্যান্য দেবতারা রাবনের ক্ষমতা ভালে ঈর্ষান্নীত হয়ে দিলেন পথি মধ্যে যুদ্ধ লাগিয়ে। রাবণও সব ভুলে লিঙ্গ মাটিতে রেখে বীর বিক্রমে শুরু করে দিলেন যুদ্ধ। ব্যাস, যুদ্ধ শেষ ,কিন্তু শর্ত অনুযায়ী রাবন সে লিঙ্গ আর মাটি থেকে হাজার চেষ্টা করেও উঠাতে পারেননি। সেই থেকে এই ধরাতেই সেই দীর্ঘতম শিব লিঙ্গ।
ভুষন্ডাশ্বরের বিশেষত্ব হল মন্দিরে প্রবেশের জন্য মন্দিরের সিঁড়ি ব্যবহার করে আপনাকে উপর থেকে নিচে নামতে হবে যদি আপনি পূজা দিতে কিংবা প্রনাম করতে চান। জল নীচে না নেমে উপর থেকেই ঢালতে পারবেন বাবার মাথায়।
কি ভাবে যাবেন?
ডুয়ার্সে’র রানী জয়ন্তী থেকে রিভার বেডের উপর দিয়ে প্রায় চার কিলোমিটার হাঁটার পর জঙ্গলের ডালপালা দিয়ে বানানো একটা পুল । পুল পেরিয়ে পাহাড়ের শ’খানেক মিটার উপরে উঠলে ছোট মহাকাল। মন্দির বলে কিছু নেই। মুলত পাহাড়ের গুহা অভ্যন্তরে এটি অবস্থিত। অবশ্য কেউ যদি হাঁটতে না চায় তবে এই পথটা গাড়ী ভাড়া করে আসা যায়।
ছোট মহাকাল থেকে প্রায় আরো ঘন্টা দুই ট্রেক করে পৌঁছানো যায় বড় মহাকালে। এই পথের বর্ননা ভাষায় অবর্ননীয়। আপনাকে নিজেকে চাক্ষুষ করতে হবে। বড় মহাকাল অবশ্য ভুটানের দিকে। আপনি পাহাড়ি পথের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে একসময় পৌঁছে যাবেন ভুটানের গ্রামে।দি রয়েল গভ. অফ ভুটান আপনাকে স্বাগত জানাবে বড় মহাকালে।
বড় মহাকালের গুহা অভ্যন্তর অনেকটা বড়। তবে প্রথমে আপনাকে বেশকিছুটা হামাগুড়ি দিয়ে প্রবেশ করতে হবে।
শিবচতুর্দশী উপলক্ষে মহাকালে প্রায় এক সপ্তাহ ব্যাপী মেলা বসে। এই এক সপ্তাহে মহাকালে আশেপাশের এলাকা থেকে প্রায় তিন থেকে চার লক্ষাধিক তীর্থযাত্রীর সমাগম হয়। ভুটান থেকে ও অনেক তীর্থযাত্রী আসে। অমরনাথ যাত্রার মতো শিবচতুর্দশী ও তার পরের দিন দুই ছোট মহাকালের আসে পাশে প্রচুর থাকা খাওয়ার ভান্ডারা বসে। নিরামিষ ভাত,খিচুড়ি, রুটি,লুচি পায়েয় বিনা পয়সায় বিতরণ করে প্রচুর সংস্থা।
নদীর বুকে বিশাল মেলা প্রাঙ্গণে এবং ভান্ডারায় অস্থায়ী ভাবে আলোর ব্যবস্থা করা হয় জেলা প্রশাসন থেকে । ওই দুদিন সারা রাতব্যাপী মহাকাল যাওয়ার ব্যবস্থা থাকে।