আলাউদ্দিনের সাম্রাজ্যবাদী নীতি
খলজি বংশের শাসক আলাউদ্দিন ছিলেন ঘোরতর সাম্রাজ্যবাদী ও দ্বিগবিজয় নীতিতে বিশ্বাসী। তাই তিনি পূর্ববর্তী সুলতানদের নীতি থেকে সরে এসে দাক্ষিণাত্য সহ সমগ্র ভারতবর্ষকে সুলতানি শাসনের অধীনে আনেন ঐতিহাসিক কে এস লাল তাই লিখেছেন, ‘The regin of Allauddin khalji in augurated a new chapta in the History of the sultani period. In terms of imperiality’
উত্তর ভারত বিজয়:- আলাউদ্দিন সাম্রাজ্যবাদী নীতির অঙ্গ হিসাবে প্রথম উত্তর ভারত বিজয় বের হয় এই সময় গুজরাট শহর রাজপুতানার রাজ্যগুলি সুলতানি কর্তৃত্ব কে অস্বীকার করেন । শুধু তাই নয় সুলতান কে বাৎসরিক কর প্রদান বন্ধ করে দেয়। সুলতান প্রথমে গুজরাটে আক্রমণ করে সোমনাথ মন্দির লুট করেন। এরপর সুলতানি বাহিনীর সামরিক আস্ফালন রনথম্বোর, চিতর , মালব, জালোর প্রভৃতি রাজ্যগুলি সুলতানি সাম্রাজ্য ভুক্ত করা হয়। এই অভিযানের মূল কথা ছিল ‘policy of annexation’ অর্থাৎ তিনি পরাজিত রাজ্যগুলোকে সরাসরি সুলতানি সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।
দাক্ষিণাত্য অভিযান এর কারণ সমূহ:- আলাউদ্দিন কেন পূর্বসূরীদের নীতি থেকে সরে এসে দাক্ষিণাত্য অভিযানে বের হলো প্রথাসিদ্ধ বাংলায় বলা হয় সুলতানের এই অভিযান ছিল দিগ্বিজয়ী ও সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতার উৎকট প্রদর্শন কে এস লাল এই প্রসঙ্গে বলেন লড়েছিল সুলতানের দাক্ষিণাত্য অভিযান এর মূল প্রেরণা দাক্ষিণাত্য অপরিমেয় ঐশ্বর্যকে উত্তর ভারতে নিয়ে আসায় ছিল তার উদ্দেশ্য সুলতান মামুদের মতই তিনি ছিলেন লুন্ঠন মানসিকতায় বিশ্বাসী কিন্তু ইউ এন দে প্রমুখেরা বলেন মন মানসিকতা আলাউদ্দিনের দাক্ষিণাত্য অভিযান এর একমাত্র কারণ ছিল না। আমির খসরু ও হিশামের বিবরণ বিবৃতিতে বলেন, দাক্ষিণাত্যে হিন্দু রাজ্যগুলিকে ধাপে ধাপে পরিণত করাই ছিল সুলতান এর একমাত্র উদ্দেশ্য। কেননা এই রাজ্যগুলি সুলতান কে অস্বীকার করেছিল, শুধু তাই নয় দেবগিরি রাজা রামচন্দ্র দেব আলাউদ্দিনের হাত দে পরাজিত গুজরাটের কর্ণ দেব কে আশ্রয় দিয়েছিলেন তাই সুলতান দাক্ষিণাত্য অভিযান করেছিলেন।
কিন্তু নিজামী ও এম ডি হাবিব বলেন ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে প্রসারিত করাইছিল আলাউদ্দিনের মূল লক্ষ্য। ইসলামের চার তারকাখচিত সবুজ পতাকা তিনি দাক্ষিণাত্যে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন । এই কারণেই তিনি বিন্দ পর্বত অতিক্রম করে দাক্ষিণাত্য অভিযান চালান। আবার কেউ কেউ বলেন দ্বিগবিজয় ও সাম্রাজ্যবাদী নীতি কে বাস্তবায়িত করতে সুলতান বিশাল সেনাবাহিনী পোষণ করেছিলেন। এর খরচ জোগানোর জন্য দরকার ছিল প্রচুর অর্থের । এই অর্থের সংকলন করতে তিনি দক্ষিণ ভারত অভিযানে বেরোন।
প্রকৃতি ও ফলাফল:- আলাউদ্দিন অভিযানে বের হন নি। এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন তার সেনাপতি মালিক কাফুর। ১৩০৬ খ্রিস্টাব্দের সেনাপতি কাপুর দেবগিরির যাদব বংশীয় রাজা রামচন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযান চালান সুলতানি বাহিনীর আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে রামচন্দ্রদেব আত্মসমর্পণ করেন। উভয়ের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে রামচন্দ্র আলাউদ্দিন কে সার্বভৌম শাসক বলে মেনে নেন । বিরাট অংকের ক্ষতিপূরণ ও বাৎসরিক কর প্রদানে প্রতিশ্রুতি দেন প্রত্যুত্তরে সুলতান রামচন্দ্রকে শাসনের অধিকার ফিরিয়ে দেন।
এরপর কাফুর ১৩০৯ খ্রিস্টাব্দে বরঙ্গল রাজ্য (তেলেঙ্গানা ) অধিপতি প্রতাপরুদ্র দেবেন প্রতি অভিযান চালান। এই অভিযানে রামচন্দ্রদেব সুলতান কে সাহায্য করেন। সুলতানি আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে কাকতীয় রাজা প্রতাপ রুদ্রদেব আত্মসমর্পণ করেন । বাৎসরিক কর প্রদান ও সুলতানি সার্বভৌমত্বের কে স্বীকার করে নিয়ে তিনিও স্বশাসনের অধিকার পান। এরপর কাফুর ১৩১০ বল্লাল এর ওপর আক্রমণ হানেন। তিনি ও সুলতানি বাহিনীর কাছে একই শর্তে আত্মসমর্পণ করেন এবং স্বয়ং শাসনের অধিকার ফিরে পান।
সন্দেহ নেই আলাউদ্দিন দাক্ষিণাত্য অভিযান সামরিক দিক থেকে রীতিমতো সফল হয়েছিল কিন্তু সামাজিক দিক থেকে এই অভিযান কতখানি সফল হয়েছিল তা নিয়ে বিতর্ক আছে ফিরিশতা বলেন পরাজিত হিন্দু রাজ্যগুলিকে সরাসরি সুলতানি সাম্রাজ্যঃ যুক্ত না করে আলাউদ্দিন ভুল করেন। কেননা এই রাজ্যগুলি সরাসরি সংযুক্ত হলে সুলতানি সাম্রাজ্যের গৌরব ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেত। কিন্তু কে এস লাল বলেন পরাজিত হিন্দু রাজ্যগুলিকে সুলতানি সাম্রাজ্যের সাথে যুক্ত না করে সঠিক কাজ করেছেন কেননা উত্তর ভারত থেকে বিন্দ পর্বত বাধা পেরিয়ে এই রাজ্যগুলিকে বেশিদিন শাসন করা সম্ভব হতো না তাই তিনি বলেন,’ there was no use of annexing what could not be consolidated forever’
তিনি এই নীতিতে সমুদ্রগুপ্তের গ্রহণ মোক্ষ অনুগ্রহ নীতি সাথে তুলনা করেছেন।
K.A Nizami , M.D.Habib সুলতানি দাক্ষিণাত্য নীতি কে ভিন্ন আঙ্গিকে বিচার করেছেন। তারা বলেন অর্থনৈতিক দিক থেকে এই নীতির সাফল্য ছিল দেখার মতো এই অভিযানের সুবাদে সুলতানি রাজবংশ ভরে উঠেছিল আবার দাক্ষিণাত্যে হিন্দু রাজ্যগুলি ও সুলতানের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নিয়েছিল এবং বৎসরান্তে কর পাঠাতে স্বীকৃত হয়েছিল এ অপরদিকে সতীশচন্দ্র বলেন এই অভিযানের সুবাদে ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতি দক্ষিণ ভারতের প্রসারিত হয়েছিল। A.L Shrivastava অর্থনৈতিক মানদণ্ডে এই অভিযানে সাফল্যকে বিচার করেছেন। তিনি বলেন, ‘No such Booty and ever before been brought to Delhi’ . বারণী একই কথা বলেন তিনি লিখেছেন ‘ কাফুর যখন উটের পিঠে বিপুল ধনরত্ন চাপিয়ে দিল্লিতে হাজির হন তখন উট গুলি যন্ত্রণায় আর্তনাদ করছিল।’