শুক্রবার ও নবান্ন ও জুনিয়র ডাক্তারদের স্নায়ুর লড়াই দেখেছে রাজ্যবাসী । দু’পক্ষের মধ্যে যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল তা ভেস্তে যায়। ডাক্তারদের দাবি ছিল ৩০ জনের প্রতিনিধি নিয়েই তাঁরা বৈঠক করবেন।সেই মতো বৃহস্পতিবার নিজেরা বাসের ব্যবস্থা করে নবান্নে পৌঁছায়। কিন্তু স্রেফ তাঁদের লাইভ স্ট্রিমিং-এর দাবি নবান্ন মেনে না নেওয়ার আলোচনা হয়নি।
নবান্নের বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার জন্য প্রশাসনিক ব্যর্থতাকেই দায়ী করেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা। আর সেই ব্যর্থতাকে সামনে রেখেই নাকি অচলাবস্থা কাটাতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু-কে চিঠি দিয়েছেন তাঁরা।
কিন্তু যে চিঠির কপি সামনে এসেছে, তা আসলে নবান্নে ভেস্তে যাওয়া বৈঠকের পর পাঠানো হয়নি। তা ডাক্তাররা খোলসা করে বলেছেন, ‘ওই চিঠি ৯ তারিখে সুপ্রিম কোর্টের শুনানির পর পাঠানো হয়েছিল। আমরা ভেবেছিলাম আরজি করের যাবতীয় ঘটনা উল্লেখ করে সব প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে বলব। সেই মর্মেই ১২ সেপ্টেম্বর আমরা রাষ্ট্রপতিকে চিঠি পাঠাই।’ জুনিয়ার ডাক্তাররা খোলাখুলি জানান, নবান্ন থেকে বেরিয়ে এরকম কোনও চিঠি তাঁরা পাঠাননি। এ নিয়ে পড়ে সাংবাদিক বৈঠকও করবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
কী কী উল্লেখ করা হয়েছিল সেই চিঠিতে?
রাজ্যের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে একের পর এক দুর্নীতির পরও এত দিন কোনও পদক্ষেপ করেনি স্বাস্থ্যভবন। সেই নিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিকর্তা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার ইস্তফার কথা বলে তাঁদের পাঁচ দফা দাবির কথা সেখানে বলা হয়।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার দু’পক্ষের বৈঠকে চিকিৎসকদের স্পষ্ট দাবি ছিল, স্বচ্ছতার কারণে তাঁরা লাইভ টেলিকাস্ট চান। কিন্তু কী অসুবিধা তা প্রশাসনের তরফে স্পষ্ট করে জানানো হয়নি ওঁদের।
ডাক্তারদের জন্য প্রায় ২ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠক না হওয়ার প্রেক্ষিতে বাংলার মানুষের কাছে ক্ষমাও চেয়ে নেন।যাঁরা নবান্নের সামনে এসেও বৈঠকে এলেন না সেই চিকিৎসকদের ক্ষমা করে দিয়ে বলেন তাঁদের এহেন আচরণে তিনি কিছুটা হলেও অসন্তুষ্ট।
এক মাসের ওপর কর্মবিরতির জেরে রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থা যে ভেঙে পড়েছে তা মেনে নেন আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাঁরা আরও জানান, সহপাঠীর বিচারের দাবিতেই আন্দোলন। সে কারণেই পাঁচ দফা দাবি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে গেছিলেন। কিন্তু প্রশাসনিক ব্যর্থতাতেই তা ভেস্তে গেল।
অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নের সভাঘরে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করেও জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক সফল করতে পারেননি। বৈঠক না হওয়ায় তিনি সাংবাদিকদের সামনে এসে জানিয়েছেন যে তিনি পদত্যাগ করতে প্রস্তুত, তবে কিছু মানুষের বিচার নয়, ক্ষমতার চেয়ার চাইছে বলে অভিযোগ করেছেন। নবান্ন থেকে মমতা বলেছেন, ”তিন দিন চেষ্টা করেও সমাধান করতে পারলাম না। আমি বাংলার মানুষকে ক্ষমা চাইছি। যারা নবান্নের সামনে এসে বৈঠকে অংশ নেননি, তাদের আমি ক্ষমা করেছি। আমাকে অনেক অসম্মান করা হয়েছে এবং আমার সরকারেরও অসম্মান হয়েছে। অনেক ভুল বোঝাবুঝি ও কুৎসা হয়েছে। সাধারণ মানুষ বিষয়টি ঠিকমতো বুঝতে পারছেন না। আমি পদত্যাগ করতে প্রস্তুত, কিন্তু তারা বিচার চান না, ক্ষমতার চেয়ার চান। আমি আশা করি মানুষ বিষয়টি বুঝবেন।”বৈঠক ব্যর্থ হওয়ায় জুনিয়র চিকিৎসকেরা নবান্নের সামনে অবস্থান করে আছেন। মমতা জানান, অনেকেই বৈঠকে আগ্রহী ছিলেন, তবে বাইরের নির্দেশনায় তারা পিছিয়ে গেছেন। তিনি বলেছেন, ”অনেকে বৈঠক করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বাইরে থেকে সমঝোতা না করার নির্দেশ ছিল। দু’-তিন জন রাজি হননি। আমি মানুষের কাছে ক্ষমা চাইছি এবং ডাক্তারদের কাজে ফিরতে অনুরোধ করছি।”মমতার মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ”নবান্নের সভাঘরের ছবি প্রকাশ করে সরকার আদালতকে প্রভাবিত করতে চাচ্ছে। বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচারের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের শুনানির কোনও সম্পর্ক নেই। আলোচনার সঙ্গে আদালত অবমাননার কিছুই নেই। এটি মমতার নাটক, যাতে তার মুখোশ খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তিনি অচলাবস্থা কাটাতে চান না।”