ইচ্ছেটা অনেক দিনের ছিল ঘুরতে যাব দার্জিলিং। যেটি ভারতে দ্বিতীয় ভূস্বর্গ বরফের কোলঘেঁষে আশা আর সাথে পাহাড়ের হাতছানি তো ছিলই দীর্ঘদিনের লকডাউনে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। মনটা টুডে চলেছিল পাহাড়ের দিকে করোনার ভয় কাটতেই বেরিয়ে পড়লাম দার্জিলিংয়ের উদ্দেশ্যে ভয় কে জয় করে 16 ই ডিসেম্বর শিয়ালদা স্টেশন থেকে রাত্রি ৯:৫৫ মিনিটে দার্জিলিং মেইল এ উঠে রওনা দিলাম নিউ জলপাইগুড়ি উদ্দেশ্যে।
রাতের ট্রেনে বাইরে কিছু দেখবার জনি তাই ডিনার আগেই সেরে উঠে ছিলাম। মধ্যে ঢুকে গেলাম নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে। এরমধ্যে বলে রাখি দার্জিলিং মেলে টিকিট প্রাইস ছিল ১২০০ টাকা মাথাপিছু এবং আসা-যাওয়া মিলিয়ে ২৪০০ মাথাপিছু। নিউ জলপাইগুড়িি স্টেশনে নেমে ভিড় দেখে বোঝা গেল বাঙালিি সত্যি
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নেমে ভিড় দেখে বোঝাই গেল বাঙালি সত্যিই ভ্রমণপ্রিয়। স্টেশনে নেমে শুনতে পেলাম কেউ যাচ্ছে সান্দাকফু তো কেউ যাচ্ছে গ্যাংটক। কিন্তু বলে রাখি এটা আমার প্রথম দার্জিলিং ভ্রমণ প্রথম অভিজ্ঞতা তাই তোমাদের সাথে শেয়ার করতে চাই।
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে একটা গাড়ি ভাড়া করে নিলাম পুরো গাড়ি ভাড়া করতে পড়ল 2000 টাকা যেহেতু আমরা চারজন ছিলাম তাই ভাগে পড়লো 500 টাকা করে । চাইলে আপনারা শেয়ার গাড়িতেও বেরোতে পারে কিন্তু একটু ভালোভাবে যাতায়াতের জন্য গাড়ি বুক করে নেওয়াই ভাল । তবে একটু দরদাম করে উঠবেন। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিং এর পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা সঙ্গে ঘন কুয়াশার মধ্যে দিয়ে ছুটে চলছিল আমাদের গাড়ি । সকাল গড়িয়ে দুপুর আমাদের গাড়ি এসে থামল ভানু ভবনের সামনে । আমাদের হোটেল বুকিং করাই ছিল বাজেট হোটেল এর মধ্যে আপনারা সামনে প্রচুর হোটেল পেয়ে যাবেন । আমরা হোটেল সিদ্ধার্থ ছিলাম। আমাদের রুম ভাড়া লেগেছিল হাজার টাকা প্রতিদিন। গিয়ে দুপুরে লাঞ্চ সেরে আমরা বেরিয়ে পড়লাম দার্জিলিং ম্যাল এর উদ্দেশ্যে । হোটেল যেহেতু ম্যাল কাছেই আমাদের তাই অসুবিধা হয়নি। দার্জিলিংয়ের চা দিয়ে শুরু হল আমাদের বিকেলটা। তারপর মোমো এটা-ওটা খাওয়া চলতেই থাকল । এক প্লেট মোমো নিয়েছে ৮০ টাকা । আর পরিবারের অন্যান্য বন্ধুদের জন্য এটা ওটা কিনেই ফেললাম । সেদিন সন্ধ্যায় একটা গাড়ি বুক করে ফেললাম পরেরদিন site sence ট্যুরের জন্য। গাড়ি ভাড়া ২৫০০ টাকা মত। ড্রাইভার বলে রাখল ভোর চারটের মধ্যে উঠে রেডি হয়ে থাকতে। রাত্রে যখন শুতে গেলাম তখন দেখলাম টেম্পারেচার ২° ডিগ্রী সেলসিয়াস নেমে গেছে। এত ঠান্ডা আর ভোর কি ভাবে উঠবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।
তবুও এত দূরে এসে টাইগার হিলে সূর্যোদয় দেখা টা কিভাবে মিস করবো।
ভোর চারটে উঠিয়ে রেডি হয়ে চলে এলাম গাড়ির কাছে চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। রডোডেনড্রন আর পাইনের বুক চিরে আমাদের গাড়ি তখন ছুটে চলল টাইগার হিলের দিকে। ভোর পাঁচটার মধ্যেই পৌঁছে দেখি বিশাল লম্বা লাইন গাড়ি। প্রচুর সংখ্যক মানুষ এসে ভিড় করেছেন সূর্যোদয়ের জন্য ভিড়ের জন্য আমাদের গাড়ি অগত্যা নিচে নামিয়ে দিল। বেশ অনেকটা খাড়ায় পথ পায়ে হেঁটে টাইগার হিলে পৌছালাম গিয়েই যেটা দেখতে পেলাম সেটা হল চা আর কফি ভিড়। চা দশ টাকা কফি কুড়ি টাকা গোটা tour আমি চা আর কফি প্রচুর পান করেছি।
অপেক্ষা করতে লাগলাম সূর্যোদয়ের জন্য । চারিদিকে এত ঘন কুয়াশা ভাবছিলাম দেখতে পাবো কিনা কাঞ্চনজঙ্ঘা কে । ব্যাস সব অপেক্ষার অবসান দর্শকদের তখন বেশিরভাগ বাঙালি ক্যামেরা মোবাইল নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধংদেহী একটা ভাব ফুটিয়ে তুলেছে। সূর্যোদয়ের মুহূর্তে আমরা কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলাম সে এক অনির্বচনীয় দৃশ্য । সব মেঘ কুয়াশা সরে পূর্ব দিকে আস্তে আস্তে লাল আভা দেখা দিল। এদিকে পাহাড়ের চূড়ায় উদয়ন সূর্যদেবকে প্রণাম জানাতে শুরু করেন অসংখ্য পূজারী । মনে মনে যেন আমিও বলে উঠলাম “ওম জবাকুসুম সঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদুত্যিং, ধন্তারিং সর্ব পাপঘ্ন প্রণতোহস্মি দিবাকরম্।”
সূর্যদেখার আর আগের মুহূর্ত ভোলার নয়। সবাই তাকিয়ে আছে আর অপেক্ষা করছে । অলৌকিক ভাবে উঁকি দিল। সেই সময়ের মানুষের অভিব্যক্তি বর্ণনা দেবার ভাষা সত্যিই আমার অজানা । সঙ্গে সঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘা অপরূপ রূপ মন জুড়িয়ে গেল। মানুষের চিৎকার ,উচ্ছ্বাস সত্যিই অনবদ্য। টাইগার হিল ছাড়িয়ে সোজা আমরা বাতাসিয়া লুপ এর দিকে চললাম। বাতাসিয়া লুপ জায়গাটিতেই দার্জিলিং টয় ট্রেন যেটা কিনা ঘুম আর দার্জিলিং এর মধ্যে চলাচল করে, সেটি এখান থেকে ঘোরে। গোল লুপের মত লাইনটি ঘুরে আবার ঘুমের দিকে যায় বাতাসিয়া লুপ হচ্ছে অনেকটা শহীদ মিনারের মত। এটা বানানো হয়েছিল গোর্খাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে। ১৯৪৭ সালে যারা ভারতের স্বাধীনতার জন্য নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন। বাতাসিয়া লুপ জায়গাটা দার্জিলিং শহর থেকে মাত্র 5 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাতাসিয়া লুপ পরিবেশ এতই মনোরম যেখানে পর্যাপ্ত হিমশীতল বাতা শরীর ও মনকে উজ্জীবিত করে দেয় ।একদিকে রাজার মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে চির তুষারাবৃত কাঞ্চনজঙ্ঘা। বাতাসিয়া লুপ দেখার পর আমরা দু’নম্বর গেট দিয়ে বেরিয়ে মোমো খেলাম। গাড়ি তখন গেটের সামনে অপেক্ষমান তারপরে আমাদের next destination rock garden।
রক গার্ডেন যাওয়ার পথেই মেঘ আর পাহাড়ের মিলনস্থলে চা বাগানের রাজত্ব। এই সৌন্দর্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর। রক গার্ডেনের ঝর্না , ফুলের সৌন্দর্য কমলালেবু গাছ সত্যিই ভীষণ সুন্দর। রক গার্ডেনের পর আমরা হ্যাপি ভেলী টি গার্ডেন যাওয়ার সময় জানতে পারলাম সেটি এখন বন্ধ। তাই সামনেই আমাদের আরেকটি চা বাগান আমাদের গাড়ি থামলো।
তারপরে আমাদের গন্তব্য ছিল জাপানিজ টেম্পল। যা দার্জিলিং ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ। জাপানি শিল্পের অনুকরণের তৈরি এই জাপানিজ টেম্পল। এখানে রয়েছে ভগবান বুদ্ধের মূর্তি। এখানে শান্ত পরিবেশ ম্যাজিকের মত নিমিষে দূর করে দেবে আপনার সব ক্লান্তি।
জাপানিজ টেম্পল পাশেই রয়েছে পিস প্যাগোডা। এখানে রয়েছে বুদ্ধের বিভিন্ন ভঙ্গিমা মূর্তি। এই স্থাপত্য চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অকল্পনীয়। এখানে পাহাড়ের ঢাল বরাবর রয়েছে বিভিন্ন পাহাড়ি ফুল গাছ। যেমন কেমেলিয়া, রডোডেনড্রন, মাগনেলিয়া, যা আপনার ভ্রমণকে করে তুলবে রোমাঞ্চ পূর্ণ।
এরপর আমাদের গন্তব্য ছিল পদ্মজা নাইডু জুয়োলজিক্যাল পার্ক । হিমালয়ান প্রাণীদের ব্যাপার গবেষণা এবং সংরক্ষণের উদ্দ্যেশে ১৯৫৮ সালে বার্চ হিলে এই চিড়িয়াখানা তৈরি হয়। শীত প্রদেশের চিড়িয়াখানা। তাই মূলত শীতের প্রাণীদের বাস এখানে। চিড়িয়াখানার বিশেষ বাসিন্দা রেড পান্ডা । একটু লাজুক প্রকৃতির ভাল্লুক বাবাজি অবশ্য এরকম কোন সমস্যা নেই পর্যটকদের দিকে তাকিয়ে সে দারুন পোজ দিয়েছে। এছাড়াও আছে স্নো লেপার্ড, হিমালয় নেকড়ে, বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ, সরীসৃপ ও পাখি। চিড়িয়াখানা প্রবেশ মূল্য ৬০ টাকা মাথাপিছু।
তারপর পৌঁছে গেলাম তেনজিং রক । তেনজিং রক একটি বিশাল পাথর যেটা দেখতে বিরাট পর্বতের একটা ছোটো মডেল মত। এখানে হিমালয়ান মাউন্টেননিয়ারিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা প্রশিক্ষণ নেয়।
Ropeway, toy train , ghum monestry বন্ধ থাকায় সেদিনের মত সাইট সিং করে ফিরে আসি হোটেলে।
পরের দিন সকালে আর কোনো প্রোগ্রাম রাখিনি। দার্জিলিং ম্যালে সামনেই মহাকাল মন্দিরে গেছিলাম। মন্দিরটি হিন্দু স্থাপত্যরীতি অনুসরণে তৈরি হয়েছে মন্দিরের সামনে প্রবেশ দ্বারের কাছে রয়েছে শিবের বাহন নন্দি মূর্তি। এছাড়াও মূল মহাকাল মন্দিরে ঘিরে ছড়িয়ে রয়েছে ছোটো ছোট কালি, দুর্গা, গণেশ, ও হুনুমান মন্দির। হিন্দু ও বৌদ্ধ দের আরাধনা প্রতীক হিসাবে আছে যথাক্রমে সারিবদ্ধ ঘণ্টা ও প্রেয়ার ফ্ল্যাগ।
এই অঞ্চলে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী অধিবাসীদের মতো মহাকাল মন্দিরের মধ্যেই শিবলিঙ্গ ও বুদ্ধ মূর্তি এখানকার দুটি পৃথক ধর্মের অনন্য সহাবস্থান কে প্রকাশ করেছে। পুজো দিয়ে আশপাশে ঘুরে দেখি। ম্যালের পিছনে বসে ভিউ পৌন্টে বসে দূরে পাহাড়, রডোডেনড্রন, মেঘের আনাগোনা দুচোখ ভরে উপভোগ করি। কারণ পরেরদিন তো বাড়ি ফেরার পালা।
বাড়ি ফেরার সময় সকালে হোটেল থেকে রওনা দেওয়ার পথে মনে পড়লো সত্যজিৎ রয়ের বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র ফেলুদা যাত্রা শুরু এখন থেকেই। ট্যাক্সি স্ট্যান্ড গাড়ি দরদাম করে ১৫০০ টাকা ৪ জনের একটা গাড়ি বুক করলাম। যেটা আসবার সময় লেগেছিল ২০০০ টাকা। আপনারা একটু দরদাম করেই উঠবেন।
যেতে যেতেও আমাদের চোখের সামনে ধরা দিল কাঞ্চনজঙ্ঘা। যেন দূরের উদাস আকাশ পেরিয়ে তাকেই আমার দুচোখ খুঁজছিল।
সম্পূর্ণ ভিডিও দেখতে travel with jayee ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন।
•আমরা যে হোটেল ছিলাম তার ফোন নম্বর, পরিতোষ- 7001955212 (হোটেল সিদ্ধার্থ)
• যাওয়ার সময় গাড়ি ভাড়া খরচা ছিল ২০০০
•ফিরবার সময় লেগেছিল গাড়ি ভাড়া ১৫০০
• ট্রেন ভাড়া ২৪০০(ac 3tier)
•সাইট সিং গাড়ি ভাড়া ২৫০০
•চিড়িয়াখানা প্রবেশমূল্য ৬০ মাথাপিছু
• রক গার্ডেন প্রবেশমূল্য ১০ মাথাপিছু
•টাইগার হিলে ৫০ মাথাপিছু
• বাতাসিয়ালুপে ২০ মাথাপিছু
• মোমো ৮০ প্রতি প্লেট, কফি ২০ টাকা, চা ১০ টাকা, বাকি খাবারে মূল্য আলাদা আলাদা বিভিন্ন দামের।
Jayee , many thanks to you
apnara hotel booking ki bhabe korechilen ?
Phone korei bole diyechilam tarpor gechilam
মিরিক বা রক গাডেন যাবার জন্য গাড়ি কি চাইছে।
Darjeeling gelei paben gari stand sekhane theke booking kore jete parben
Darjelling bangali hotel e khabar er kmn dam?
Emni reasonable khub akta besi na. Mall prochor hotel paben oshubidha hobe na