দীঘা মন্দারমণি গিয়ে গিয়ে একঘেয়ে হয়ে গেছেন? সমুদ্র প্রেমী হয়েও বুঝতে পারছেন না ২/৩ দিন ছুটিতে নতুন কোথায় যাওয়া যায় ? তাহলে আজ আপনাদের কে কিছু অফবিট নতুন জায়গা সন্ধান দেব । তাহলে বেরিয়ে পড়ুন এক কলকাতার কাছেই সেরা সেরা চোখ ধাধানো অফবিট সমুদ্র সৈকত থেকে।
জুনপুট : জুনপুট বহু বছর ধরে মানুষের ভ্রমণের জন্যে সেরা জায়গা হিসাবে থাকলেও এখন আর মানুষের আনাগোনা নেই । ফলে কোলাহল মুক্ত নির্জন পরিবেশের আনন্দ উপভোগ করতে চাইলে যেতে পারেন জুনপুট । এই নিরিবিলি নির্জন সমুদ্রতট আপনাকে দেবে দারুন রিফ্রেশমেন্ট । পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি শহরের খুব কাছেই জুনপুট। কলকাতা থেকে জুনপুটের দূরত্ব ১৬০ কিলোমিটারের মতো। পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি থেকে জুনপুট কম-বেশি ১০ কিলোমিটার
জুনপুটে আপনি সুন্দর সমুদ্র প্রান্তে সময় কাটাতে পারেন, যেখানে দীর্ঘ কর্দমাক্ত বেলাভূমি প্রসারিত হয়ে ওঠে। এখানে কাঁথি থেকে সরাসরি যাওয়া যায়, এবং কলকাতা থেকে জুনপুটের অবস্থান প্রায় ১৬০ কিলোমিটার। এই সমুদ্র সৈকতে আপনি বাঁকিপুট নামক আরও একটি সৈকত পেতে পারেন, যা তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।জুনপুটে আপনি সুন্দর সমুদ্র প্রান্তে বেলা বেলা বেড়ায় লাল কাঁকড়ার দল দেখতে পাবেন। এখানে পাখির দেখা মিলবে এবং পর্যটকদের থাকার জন্য বেশ কিছু হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। আপনি এখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সময় কাটাতে পারেন, যেটি আপনার মন খুলে দেবে।
মৌসুনী দ্বীপ: কলকাতা থেকে এই দ্বীপটির দূরত্ব প্রায় ১২০ কিলোমিটার। একেবারেই নিরিবিলি এই সৈকতে চাইলে নিজের গাড়িতেও যেতে পারেন। ট্রেনে যেতে হলে নামখানা পৌঁছতে হবে এবং সেখান থেকে যেতে হবে টোটোয়। তারপর নৌকা করে পৌঁছন যাবে মৌসুনী দ্বীপ। এখানে একাধিক পকেট ফ্রেন্ডলি ক্যাম্প রয়েছে। ক্যাম্পগুলিতে চারবেলা থাকা-খাওয়া সমেত খরচ মাথাপিছু ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে।
কিভাবে যাবেন: মৌসুনী দ্বীপ কলকাতা থেকে সড়ক ও রেলপথ দু’ভাবেই পৌঁছাতে পারেন। ট্রেনে গেলে শিয়ালদহ দক্ষিণ স্টেশন থেকে আপনাকে নামখানা স্টেশনে যাত্রা করতে হবে, এবং তারপর নামখানা থেকে নৌকার দ্বারা মৌসুনী দ্বীপে যাওয়া যাবে। কোথায় থাকবেন: মৌসুনী দ্বীপে কটেজ এবং তাবু ধরে থাকার দুটো অপশন আছে। আপনি কটেজ বেছে নিতে পারেন। এখানে আপনি সুন্দরবনের কাছাকাছি একটি জায়গায় থাকবেন, যেখানে আপনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
দক্ষিণ পুরুষোত্তমপুর: নিরিবিলিতে দু-দিন কাটাতে পূর্ব মেদিনীপুরের এই সমুদ্র সৈকতটির জুড়ি মেলা ভার। এখনও অনেক পর্যটকের কাছে এই স্পটটি অজানা। তাই এখানে খুব বেশি হোটেল এখনও গড়ে ওঠেনি। তবে বেশ কয়েকটি ছোট হোটেল এবং ব্যাকপ্যাকার্সের টেন্ট ক্যাম্পের ব্যবস্থা রয়েছে। আপনার চাইলে সেখানে থাকতে পারেন । ব্যাকপ্যাকার্স টেন্ট ক্যাম্পে খাওয়া-দাওয়ার বন্দোবস্ত ভাল। দুপুরেও ভুরিভোজের পরে সন্ধেয় ক্যাম্পে থাকে বনফায়ারের ব্যবস্থা। ব্যাকপ্যাকার্স ক্যাম্পে চারবেলা থাকা-খাওয়া সমেত খরচ মাথাপিছু ১৫০০ টাকা মতো।
বগুড়ান জলপাই: এখানে জোয়ারের সময় তড়তড়িয়ে জল এগিয়ে আসে, তবে ভাঁটার সময় জল অনেকটাই নেমে যায়। সমুদ্র সৈকতে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ কিন্তু হারাবেন না। এই সমুদ্রতটের মায়াবী রূপ চোখে পড়ে বেলা পড়লে। আপনি কলকাতা থেকে মাত্র চার ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যাবেন এখানে। কাঁথি থেকে খুব কাছে। এখানকার সমুদ্রতটও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আর লাল কাঁকাড়ায় ভর্তি। এই বগুড়ান জলপাই সমুদ্র সৈকতটি খুব বিস্তৃত নয়। এটা একটা বড় খাঁড়ির মতো। সেই খাঁড়িই ঢুকে গিয়েছে গভীর সমুদ্রে। সমুদ্রতটে দাঁড়িয়েই দেখতে পাবেন ডিঙি নৌকার সারি, এ ছাড়াও দেখা মিলবে মাছ ধরার ট্রলারের। এখানে আপনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে শান্তির মিশ্রণ পাবেন।এখানে সমুদ্র দীঘার মতো অতটা উত্তাল নয় বা সাজানো হোটেলেও সেভাবে নেই, তবে এটি একটি নির্জন সমুদ্র সৈকত, যেখানে শুধু ঢেউয়ের আওয়াজ এবং সঙ্গে সামুদ্রিক কচ্ছপ আপনার কাছে থাকবে।
লক্ষ্মীপুর: কলকাতার কাছের এই কোলাহলহীন সমুদ্রতট। এখানে এক বার গেলে মনে হবে বারে বারে ফিরে যাই। বকখালির কাছেই লক্ষ্মীপুর সমুদ্র সৈকত। কলকাতা থেকে দূরত্ব যার ১৩৬ কিলোমিটার। বঙ্গোপসাগরের নিরিবিলি এই তটের অপূর্ব শোভা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সাগরতট লাগোয়া ছোট্ট গ্রামের অসাধারণ প্রাকৃতিক পরিবেশ মন তো কাড়বেই। বকখালি সি বিচ থেকে পায়ে হেঁটে মিনিট ২০ গেলেই পড়বে এই লক্ষ্মীপুর সমুগ্র সৈকত। অনেকে এই সি বিচকে ‘মিনি গোয়া’ বলেন। সৈকতের গা ঘেঁষে থাকা বড় বড় উইন্ড মিল নজর কাড়বে আপনার ।
বাঁকিপুট: বহুদূর বিস্তরিত সাগরতটের গা ঘেঁষে সারি সারি ঝাউগাছ। মূলত সমুদ্রের টানেই এখানে যান পর্যটকরা। ঝাউবনে দিনভর পাখির কলকাকলি গোটা পরিবেশেই একটা দারুণ মাদকতা এনে দেয়। আপনি ঘণ্টার পর কাটিয়ে দিতে পারেন এই ঝাউবনে। উপরি পাওনা সাগরতট জুড়ে থাকা লাল কাঁকড়ার সারি। এই বঙ্গোপসাগরের তীরে নিরিবিলিতে উইকেন্ড কাটানোর সেরার সেরা ঠিকানা এই বাঁকিপুট। এই বাঁকিপুটের গা ঘেঁষেই রয়েছে ইংরেজ আমলে তৈরি বাতিঘর। মন চাইলে, সমুদ্রপাড় দিয়ে হাঁটা লাগিয়ে পৌঁছে যান দরিয়াপুরের বাতিঘরে। বাতিঘরের মাথায় উঠে গোটা বাঁকিপুটের সৌন্দর্য্য তারিয়ে তারিয়ে উপভোগের সুযোগ মিলবে। এখানেই রয়েছে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতি বিজড়িত কপালকুণ্ডলার মন্দির ঘুরে দেখতে পারেন ।
তাহলে আর দেরি কিসের ছুটির দিন দেখেই প্রিয় জন বা বন্ধুদের সাথে নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন এই অফবিট ডেস্টিনেশন এ।