বাড়িতে থেকে মনটা হাঁপিয়ে উঠেছে মন এবার ছুটি নিতে চাইছে? তাহলে এবারের গন্তব্য হতে পারে পাহাড় ঘেরা এই ছোট্ট গ্রামটি, কালিম্পং এর খুব কাছাকাছি জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট হলো এই লাভা রিশপ। রিশপ যেতে হলে আপনাকে লাভার উপর দিয়ে যেতে হবে । কালিম্পং জেলা ৭৭০০ উচ্চতায় অবস্থিত মেঘে ঢাকা নিঃসঙ্গ মায়াবী এক পাহাড়ি গ্রাম। লাভা এখানে যেতে হলে রাস্তা কিছুটা খারাপ হলেও এর প্রাকৃতিক পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করে দেবে। পথের একদিকে সবসময় পাহাড় আরেকদিকে খাদ অথচ দুদিকেই বেশ একটা জঙ্গল জঙ্গল ভাব । গাড়ির জানালা দিয়ে আসা করা মিঠে রোদ খেতে খেতে আচমকা ঢুকে পড়বেন আধো অন্ধকার এক স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে, গগনচুম্বী শতাব্দীপ্রাচীন গাছের আড়ালে চলে সূর্য আর গায়ের ওপর এসে পড়ে ফান । কুয়াশা ঢাকা শুনশান রাস্তার ওপর দিয়ে মাঝে মাঝে বয়ে চলেছে ঝরনা, তারপরের বাক পেরিয়েই পেয়ে যাবেন সূর্য । নেওড়া ভ্যালি অভয়ারণ্যের সীমানায় সরলবর্গীয় পায়ের মাঝে শান্ত পরিবেশ পাহাড়ের ঢালে বানানো সাজান সুন্দর ঘর বাড়ি ট্যাক্সি স্ট্যান্ড সরু রাস্তা আর দুদিকে নানা রকম দোকান বাজার অপূর্ব সুন্দর মনেস্ট্রি আর সরল সাদাসিধে স্থানীয় মানুষজন নিয়ে গড়ে উঠেছে এই ছিমছাম গ্রাম কালিম্পং। দার্জিলিংয়ের থেকে লাভার উচ্চতা বেশ কিছুটা বেশি হওয়ার দরুন শীতকাল বাদে বছরের বাকি সময় ও দিনের অধিকাংশ সময় এই গ্রাম মেঘে ঢেকে থাকে।
এখানে বৌদ্ধমন্দির ও প্রাকৃতিক পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। ট্যাক্সি স্ট্যান্ড আর্মেন বাজার এর কাছে কটা হোটেল ও হোমস্টে থাকলেও সেরা জায়গা ডাবলু বি এফ ডি সি নেচার অ্যাসিস্ট্যান্ট থেকে হাঁটা পথে কিছুটা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে অবস্থিত। অবস্থান গুনে অনন্য লাভার থেকে কাছের রেল স্টেশন হল মাল জংশন। 65 কিলোমিটার দূরত্ব লাভা থেকে ফিরবার বাস ও শেয়ার গাড়ি পাওয়া যায় । শিলিগুড়ি যাওয়ার জন্য এখানে সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হল লাভা মনেস্ট্রি। শান্ত সমাহিত পরিবেশে শুধু নয় স্থাপত্য ও খুব সুন্দর পিছনে আছে সুন্দর ফুলের বাগান। এখানে প্রার্থনার সময় উপস্থিত থাকলে বৌদ্ধ বাদ্যযন্ত্র সম্মিলিত মন্ত্র পাঠ আপনার দেহ থেকে মনকে আলাদা করে এক অন্য ডাইমেনশন থেকে ঘুরিয়ে আনবে ।
মনাস্ট্রি থেকে হাঁটাপথে পরে নেওড়া ভ্যালি ন্যাচারাল ইন্টারপ্রিটেশন সেন্টার। সকাল 8 টা থেকে 12 টা ও বেলা একটা থেকে চারটে অব্দি খোলা পাবেন। প্রতি বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে । বুধবার করে এখানে হাট বসে। লাভার কাছেই আছে লোলেগাঁও গাড়িতে গেলে বেশি দূর নয়। এর ভিউ পয়েন্ট থেকে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার অপূর্ব দৃশ্য আছে এক মনাস্ট্রি হেরিটেজ পার্ক।
এছাড়াও আপনারা যেতে পারবেন লাভার থেকে কোলাখাম ও ছাঙ্গে ফলস। লাভার থেকে কোলাখাম দূরত্ব 10 কিলোমিটার যেতে সময় লাগবে 1 ঘন্টা মত । কোলাখাম থেকে চ্ছাঙ্গের দূরত্ব 5 কিলোমিটার। সেরা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে মানা হয় রিশপ রিম্বিক কে। পাহাড়ের ধাপে ধাপে নানা রকম ফুলে ঢাকা ছোট্ট সাজান গ্রাম। রিশপকে ঘিরে রয়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘা সহ আরো বেশ কয়েকটি শৃঙ্গ জঙ্গলের মধ্যে করে যেতে পারে দেড় কিলোমিটার দূরে টিফিনদাড়া ভিউ পয়েন্ট। এখানে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত আপনাকে মুগ্ধ করে তুলবে।
পাখি দেখা এবং পাখির ছবি তোলার জন্য রিশপ হল সেরা গন্তব্য। নেওড়া ভ্যালি জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন এই গ্রামের চারিদিকে জঙ্গল মাঝেমধ্যেই সবুজ উপত্যাকায় আটকে পরে মেঘ তখন গোটা উপত্যাকা জুড়ে চলে মেঘ রোদ্দুর এর খেলা। কিন্তু রিশপে দুটো সমস্যা আছে এক হল বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এবং কাজেই রিসোর্ট কে সন্ধ্যের পর বেশিরভাগ সময়ই জেনারেটরের জ্বালিয়ে রাখতে হয় আর জলের খুব সংকট ।
পরের গন্তব্য হচ্ছে কোলাখাম। রিশপ থেকে কোলাখাম এর দূরত্ব ১৩-১৪ কিলোমিটার মত । রিশপ থেকে কোলাখাম এর গাড়ি ভাড়া পড়ে ১৪০০ টাকা মত আর ছাঙ্গে waterfall অবধি যেতে হলে ৮০০টাকা বেশি পড়ে। কোলাখাম থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা খুব ভালো করে দেখা যায় ।এর উপরেই আছে নেওড়া ভ্যালি জঙ্গল ক্যাম্প তবে এর খরচ অনেক বেশি কোলাখাম এ নানা রকম হোম স্টে পেয়ে যাবেন খরচ ১০০০ থেকে ১৫০০ মধ্যে মাথাপিছু। এই কোলাখাম এর প্রায় আড়াইশো রকম প্রজাতির পাখি আছে শতাব্দীপ্রাচীন গাছ দেখা যায় আর দেখা যায় রেড পান্ডা এখানে আসার সময় হল অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস।
অবশ্যই মহামারী কাটলে এবং ভ্যাকসিন নেওয়া হয়ে থাকলে নেক্সট গন্তব্য হতেই পারে এটি।
পুরোটি ভিডিও আকারে দেখতে travel with jayee আমার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন সেখানে আমার সমস্ত ঘোরার ভিডিও বিস্তারিতভাবে পেয়ে যাবেন।