ডজার্সের ঐতিহাসিক পুনরাবৃত্তি: ইয়ামামোতো MVP, স্মিথের ১১তম ইনিংসে বাজিমাত!
লস অ্যাঞ্জেলস ডজার্স (los angeles dodgers) বেসবলের বিশ্বমঞ্চে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ওয়ার্ল্ড সিরিজ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। এক রোমহর্ষক ও নাটকীয় সপ্তম খেলায় টরন্টো ব্লু জেয়সকে ৫-৪ ব্যবধানে পরাজিত করে দলটি এই ঐতিহাসিক কীর্তি স্থাপন করে। ১৯৯৮-২০০০ সালের নিউ ইয়র্ক ইয়াঙ্কিজের পর ডজার্সই প্রথম দল যারা টানা দুটি ওয়ার্ল্ড সিরিজ শিরোপা জিতল। এই বিজয়ের মূল কান্ডারী ছিলেন জাপানি পিচার ইয়োশিনোবু ইয়ামামোতো, যিনি অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য ওয়ার্ল্ড সিরিজ MVP নির্বাচিত হয়েছেন, এবং ক্যাচার উইল স্মিথ, যার ১১তম ইনিংসের হোম রানটি ছিল জয়সূচক।
নাটকীয়তায় ভরপুর সপ্তম খেলা (Game 7)
টরন্টোর রজার্স সেন্টারে অনুষ্ঠিত ফাইনাল ম্যাচটি ছিল টানটান উত্তেজনাপূর্ণ। ডজার্স একসময় ৪-২ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েছিল। নবম ইনিংসে পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে থাকা অবস্থায়, ডজার্সের সেকেন্ড বেসম্যান মিগেল রোহাস এক সলো হোম রান মেরে ৪-৪ এ স্কোর সমান করেন, যা ম্যাচটিকে অতিরিক্ত ইনিংসে নিয়ে যায়।
এরপর ম্যাচের ভাগ্য ঝুলে ছিল ১১তম ইনিংসে। ব্লু জেয়সের পিচার শেন বিবারকে নিশানা করে ডজার্সের ক্যাচার উইল স্মিথ একটি ২-০ স্লাইডারকে বাম ফিল্ডের দিকে উড়িয়ে দেন। বলটি সরাসরি ব্লু জেয়সের বুলপেনের উপর দিয়ে যায়—যা ছিল একটি সলো হোম রান এবং ডজার্সকে এনে দেয় ৫-৪ ব্যবধানে কাঙ্ক্ষিত লিড। এই মুহূর্তটি ছিল ডজার্স ভক্তদের জন্য শ্বাসরুদ্ধকর আনন্দের।
ইয়োশিনোবু ইয়ামামোতোর MVP পারফরম্যান্স
ডজার্সের শিরোপা ধরে রাখার পিছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল জাপানের ‘শো-টাইম’ খ্যাত তারকা ইয়োশিনোবু ইয়ামামোতোর। টুর্নামেন্ট জুড়ে তার চিত্তাকর্ষক পিচিং তাকে ওয়ার্ল্ড সিরিজ MVP-এর খেতাব এনে দিয়েছে।
- গেম ২-এ মাস্টারক্লাস: সিরিজের দ্বিতীয় খেলায় ইয়ামামোতো এক অসাধারণ পারফরম্যান্স উপহার দেন। তিনি চার-হিটার ছুঁড়ে কমপ্লিট গেম করেন (২০১৫ সালের পর ওয়ার্ল্ড সিরিজে প্রথম)।
- গেম ৭-এ অবিশ্বাস্য রিলিজ: সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় ছিল, তিনি আগের রাতে গেম ৬-এ ৯৬টি পিচ করার পরেও, গেম ৭-এর এক কঠিন মুহূর্তে রিলিফ পিচার হিসেবে মাঠে নামেন। তিনি ২ ২/৩ ইনভ্যালিড স্কোরলেস ইনিংস পিচ করেন এবং ১১তম ইনিংসে ব্লু জেয়সের ব্যাটিং লাইন-আপকে শান্ত রাখেন। তার এই অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সই ডজার্সকে জয়ের পথে চালিত করে।
ইয়ামামোতোর অসাধারণ ধৈর্য ও পিচিং নিয়ন্ত্রণ ব্লু জেয়স ব্যাটারদেরকে পুরো সিরিজ জুড়েই বিভ্রান্ত করেছে। ১২ বছরের জন্য $৩২৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তিতে ডজার্সে আসা এই পিচার প্রমাণ করলেন, কেন তাকে বেসবলের অন্যতম সেরা পিচার হিসেবে গণ্য করা হয়।
চ্যাম্পিয়নদের জয়যাত্রা
লস অ্যাঞ্জেলস ডজার্স দল হিসেবে তাদের ধারাবাহিকতা প্রমাণ করেছে। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অভিজ্ঞ ও তরুণ খেলোয়াড়দের সম্মিলিত পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মতো। উইল স্মিথের জয়সূচক হোম রান ছাড়াও, শোহেই ওহutani এবং ফ্রেডি ফ্রিম্যানের মতো তারকারা নিয়মিতভাবে দলের সাফল্যে অবদান রেখেছেন।
এই বিজয়ের মাধ্যমে ডজার্স শুধু টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জিতল না, তারা বেসবলের ইতিহাসে নিজেদের স্থান আরও মজবুত করল। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই ফাইনালটি বেসবলের অনুরাগীদের মনে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলে গেল।
কেন এই পুনরাবৃত্তি এত গুরুত্বপূর্ণ?
লস অ্যাঞ্জেলস ডজার্সের এই পরপর দুবার চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা বেসবলের ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা।
- ২৫ বছরের অপেক্ষা: ডজার্স হলো ১৯৯৮-২০০০ সালের নিউ ইয়র্ক ইয়াঙ্কিজের পর মেজর লীগ বেসবলের (MLB) প্রথম দল যারা টানা দুটি ওয়ার্ল্ড সিরিজ শিরোপা জিতল। আধুনিক বেসবলে, যেখানে প্লেয়াররা প্রায়শই দল পরিবর্তন করে এবং প্রতিযোগিতা অনেক বেশি তীব্র, সেখানে কোনো দলের পক্ষে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা সত্যিই কঠিন।
- ন্যাশনাল লীগের প্রথম: ন্যাশনাল লীগের (NL) দলগুলোর মধ্যে ডজার্স হলো ১৯৭৫-৭৬ সালের সিনসিনাটি রেডসের পর প্রথম দল, যারা টানা দুবার শিরোপা জিততে পারল। এই জয় এনএল-এ ডজার্সের আধিপত্যকে আরও সুপ্রতিষ্ঠিত করলো।
২. ইয়ামামোতোর মহাকাব্যিক ত্যাগ (The Epic Relief Appearance)
ওয়ার্ল্ড সিরিজ MVP ইয়োশিনোবু ইয়ামামোতোর পারফরম্যান্স নিয়ে আরও বিশদ জানতে চেয়েছেন, যা তার মর্যাদাকে কিংবদন্তীর পর্যায়ে নিয়ে গেছে:
- নিয়ম ভাঙা পিচিং: গেম ৬-এ ৯৬টি পিচ করার মাত্র একদিন পরেই গেম ৭-এর এক চরম মুহূর্তে তিনি রিলিফ পিচার হিসেবে মাঠে নামেন। একজন স্টার্টিং পিচারের জন্য এত কম বিশ্রামে মাঠে নামাটা প্রায় unheard of। ডজার্সের ম্যানেজার ডেভ রবার্টস যদিও প্রথমে বলেছিলেন, ইয়ামামোতো সম্ভবত গেম ৭-এর জন্য অ্যাভেইলেবল নন, কিন্তু দলের প্রয়োজনে ইয়ামামোতো তার ইচ্ছাপ্রকাশ করে প্রস্তুত হন।
- জয় নিশ্চিত করা: তিনি ১০ম ইনিংসে কোনো রান না দিয়ে সহজেই পার করেন। এরপর ১১তম ইনিংসে উইল স্মিথের হোম রানের পর যখন ডজার্স লিড নেয়, তখন ইয়ামামোতোই শেষ পর্যন্ত পিচ করেন। ১১তম ইনিংসে ব্লু জেয়স একজন রানারকে প্রথম ও তৃতীয় বেসে নিয়ে এসে আবারও হুমকি তৈরি করেছিল। কিন্তু ইয়ামামোতো শেষ ব্যাটারকে একটি গ্রাউন্ড আউট করিয়ে খেলাটি শেষ করেন, যা ছিল একটি গেম-এন্ডিং ডাবল প্লে! এই অসাধারণ ধৈর্য এবং চাপ সামলানোর ক্ষমতাই তাকে MVP-এর মুকুট পরিয়েছে।
৩. গেম ৭-এর শ্বাসরুদ্ধকর মোড়
সপ্তম খেলায় বেশ কিছু নাটকীয় মুহূর্ত ছিল যা ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দেয়:
- নবম ইনিংসে জীবন ফেরা: ডজার্স যখন ৪-৩ ব্যবধানে পিছিয়ে ছিল এবং ব্লু জেয়স জেতার থেকে মাত্র দুই আউট দূরে, তখনই মিগেল রোহাসের সলো হোম রান খেলাটিকে ৪-৪ এ সমতা এনে অতিরিক্ত ইনিংসে নিয়ে যায়।
- বেস লোডেড নাটক: ৯ম ইনিংসে টরন্টো ব্লু জেয়স তাদের প্রথম চ্যাম্পিয়নশিপের স্বপ্ন দেখছিল, যখন তারা বেস লোডেড অবস্থায় চলে আসে। কিন্তু ডজার্সের পিচার সেরান্থনি ডোমিঙ্গেজ অবিশ্বাস্যভাবে সেই কঠিন পরিস্থিতি থেকে কোনো রান না দিয়ে বেরিয়ে আসেন এবং ম্যাচটিকে অতিরিক্ত ইনিংসে নিয়ে যেতে সক্ষম হন।
- ফাইনাল আউট: ১১তম ইনিংসে ব্লু জেয়স আবার রানারদের প্রথম ও তৃতীয় বেসে নিয়ে এলেও ইয়ামামোতো শেষ ব্যাটারকে আউট করে ডাবল প্লে করিয়ে দেন, যার মাধ্যমে ডজার্সের জয় নিশ্চিত হয়।
এই সিরিজটি কেবল একটি শিরোপা জয় ছিল না, এটি ছিল ইয়োশিনোবু ইয়ামামোতোর মতো এক নতুন তারকার উত্থান এবং লস অ্যাঞ্জেলস ডজার্সের দলগত দৃঢ়তার এক অনন্য উদাহরণ।