জুবিন গার্গের শেষ কীর্তি: ‘রই রই বিনালে’র আবেগঘন মুক্তি

🌟 জুবিন গার্গের শেষ কীর্তি: ‘রই রই বিনালে’র আবেগঘন মুক্তি 🌟

ভূমিকা: কিংবদন্তীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা

অসমীয়া সঙ্গীত ও চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী শিল্পী জুবিন গার্গের অকাল প্রয়াণ তাঁর কোটি কোটি ভক্তকে গভীর শোকে আচ্ছন্ন করেছে। তাঁর অনুপস্থিতি এক শূন্যতা সৃষ্টি করলেও, শিল্পীর শেষ সৃষ্টি—তাঁর স্বপ্নের চলচ্চিত্র ‘রই রই বিনালে’-এর মুক্তি যেন শোকের মাঝেও এক আবেগময় উৎসব। তাঁর মৃত্যুর (সেপ্টেম্বর ২০২৫) পর, জুবিনের একান্ত ইচ্ছা অনুযায়ী ৩১ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে মুক্তি পেয়েছে এই সিনেমাটি, যা এখন শুধু একটি চলচ্চিত্র নয়, অনুরাগীদের কাছে তাদের প্রিয় ‘জুবিন দা’-কে শেষবারের মতো পর্দায় দেখার এক অমূল্য সুযোগ। এই অসমীয়া ছবিটি মুক্তি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এক অভূতপূর্ব সাড়া ফেলেছে এবং আঞ্চলিক সিনেমার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করেছে।


🎬 ‘রই রই বিনালে’: এক স্বপ্নের ফসল

‘রই রই বিনালে’ চলচ্চিত্রটি ছিল জুবিন গার্গের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। জানা যায়, প্রায় তিন বছর ধরে এই সিনেমাটি নিয়ে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। শুধু অভিনয় নয়, এটি তাঁর নিজস্ব সৃষ্টি – ছবির গল্প এবং সঙ্গীতও তাঁরই রচনা। এটি একটি মিউজিক্যাল লাভ স্টোরি (সঙ্গীত নির্ভর প্রেমের গল্প), যা সন্ত্রাসবাদের ক্ষত থেকে সেরে ওঠা এক অঞ্চলের পটভূমিতে তৈরি হয়েছে। এই ছবিতে জুবিন গার্গ একজন দৃষ্টিহীন শিল্পী বা অন্ধ গায়কের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সিনেমার ট্রেলার এবং কিছু সংলাপ, বিশেষ করে সমুদ্র নিয়ে তার চরিত্রের উক্তি, শিল্পীর রহস্যময় মৃত্যুর (সমুদ্রে সাঁতার কাটতে গিয়ে) সঙ্গে এক অদ্ভুত সমাপতন তৈরি করেছে, যা ভক্তদের আরও বেশি আবেগপ্রবণ করে তুলেছে।

জুবিন গার্গের স্ত্রী এবং ছবির সহ-প্রযোজক গরিমা শৈকিয়া গার্গ জানিয়েছেন, এটি ছিল জুবিনের স্বপ্নের ছবি। ছবির পরিচালক রাজেশ ভূঁইয়াও নিশ্চিত করেছেন যে ছবিটির ৮০-৯০ শতাংশ সংলাপ এবং গান জুবিনের নিজের কণ্ঠে ল্যাপেল মাইকে রেকর্ড করা ছিল। ফলে দর্শকরা আবারও প্রেক্ষাগৃহে তাঁর অনন্য কণ্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছেন—এ যেন জীবনের পর্দা থেকে মৃত্যুর পর্দায় এক আবেগঘন প্রত্যাবর্তন।


🔥 মুক্তির উন্মাদনা: টিকিট বিক্রিতে রেকর্ড

‘রই রই বিনালে’র মুক্তিকে ঘিরে আসাম জুড়ে যে উন্মাদনা দেখা দিয়েছে, তা অভূতপূর্ব। মুক্তির আগেই রাজ্যের প্রায় ৯০টি প্রেক্ষাগৃহের প্রথম দিনের সব টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে যায়। এমনকি, গুয়াহাটির কিছু প্রেক্ষাগৃহে ভোর ৪টা ২৫ মিনিট থেকেও শো শুরু হয়েছে এবং সেই শো-ও ছিল হাউসফুল। শুধু আসামেই নয়, দিল্লি-এনসিআর, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু, কলকাতা সহ ভারতের ৪৬টিরও বেশি শহরে ছবিটি মুক্তি পেয়েছে, যা অসমীয়া সিনেমার জন্য এক বিশাল সাফল্য। এটি অসমীয়া চলচ্চিত্র হিসেবে সবচেয়ে বড় আকারের রিলিজ, যা আঞ্চলিক চলচ্চিত্রের জন্য এক মাইলফলক।

হল মালিকরা জানাচ্ছেন, দর্শকদের বিপুল চাহিদার কারণে অতিরিক্ত শো-এর ব্যবস্থা করতে হয়েছে। এই আবেগ ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ এমন যে, আসামের অনেক হল মালিক জুবিনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক সপ্তাহের জন্য অন্যান্য নতুন ছবির প্রদর্শনী বন্ধ রেখে শুধুমাত্র ‘রই রই বিনালে’ চালাচ্ছেন।


🙌 সরকারি উদ্যোগ এবং শ্রদ্ধাঞ্জলি

জুবিন গার্গের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসাম সরকারও বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। আসাম সরকার ঘোষণা করেছে যে ‘রই রই বিনালে’ চলচ্চিত্রটি থেকে সংগৃহীত রাজ্য জিএসটি-এর অংশ জুবিন গার্গের প্রতিষ্ঠিত ‘কালাগুরু আর্টিস্ট ফাউন্ডেশন’-এ হস্তান্তর করা হবে, যা পিছিয়ে পড়া শিল্পীদের কল্যাণে কাজ করে। অনেক প্রেক্ষাগৃহেই জুবিন গার্গের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধাস্বরূপ আসন তৈরি করা হয়েছে এবং দর্শকদের স্মারক হিসেবে গাছও উপহার দেওয়া হচ্ছে। এই সিনেমাটি শুধু জুবিনের শেষ কাজ নয়, এটি সমগ্র আসামের জনগণের কাছে এক আবেগঘন শ্রদ্ধার্ঘ্য।


উপসংহার

‘রই রই বিনালে’ জুবিন গার্গের শৈল্পিক প্রতিভার এক সামগ্রিক প্রতিচ্ছবি। একজন অভিনেতা, গল্পকার, সুরকার এবং গায়ক হিসেবে তিনি এই ছবিতে তাঁর সবটুকু নিংড়ে দিয়েছেন। এই ছবি অসমীয়া চলচ্চিত্র জগতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। প্রিয় শিল্পীকে শেষবারের মতো বড় পর্দায় দেখতে ভক্তদের এই বিপুল ভিড় প্রমাণ করে, জুবিন গার্গ শুধু একজন গায়ক বা অভিনেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন তাদের হৃদয়ের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাঁর এই শেষ কীর্তি, ‘রই রই বিনালে’, চিরকাল আসামের চলচ্চিত্র ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান দখল করে থাকবে।



Leave a comment